স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসার সঠিক নিয়ম

 


প্যারালাইসিস এর মূল কারণ হচ্ছে স্ট্রোক আমরা জানি যে ব্রেন স্ট্রোক করলে মানুষ সাধারণত প্যারালাইসিস হয়ে যায়। মানে মানুষের শরীরের অর্ধেকটা অবশ হয়ে যাওয়াকে বুঝায়। সম্ভবতই মানুষ দুই ধরনের স্ট্রোকের কারণে প্যারালাইসিস হয়ে থাকে যেমন একটি হচ্ছে ব্রেন স্ট্রোক এবং

আরেকটি হচ্ছে আমাদের যে মেরুদন্ড আছে সেই মেরুদন্ডের স্পাইনাল কর্ড। এই স্পাইনাল কর্ড কোন কারনে যদি ড্যামেজ হয়ে যায় তাহলে  মানুষের প্যারালাইসিস হয়ে থাকে । ব্রেনে দুই ধরনের স্ট্রোক হয়ে থাকে, একটি স্ট্রোক হচ্ছে  ISCHEMIC স্ট্রোক আটি হচ্ছে  HEMORRHAGIC স্ট্রোক।

সুচিপত্র: স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসার সঠিক নিয়ম

ভূমিকা

হেমরয়েজ বলতে বোঝায় ব্রেনের ব্লাড প্রেসার বেড়ে গেলে ব্লাড ভেসেলগুলো ফেটে গিয়ে রক্তক্ষরণ হওয়াকে বুঝায়। আর যখন ব্রেনের ব্লাড সার্কুলেশন কমে যায় তখন ব্লাড ভেসেলগুলো শুকিয়ে গিয়ে ড্যামেজ হয়ে যায় এটা হচ্ছে  ISCHEMIC স্ট্রোক। এই দুই ধরনের স্ট্রোকের কারণেই মানুষের শরীরের একপাশ প্যারালাইসিস হয়ে যায়।

এই প্যারালাইসিস সমাধানের জন্য অনেকেই ফিজিওথেরাপি দেন অনেকে আবার কবিরাজের শরণাপন্ন হন আবার অনেকেই হোমিও চিকিৎসা দিয়ে থাকেন। প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসার ক্ষেত্রে ওষুধের চাইতে ব্যায়াম করানোটাই সবচেয়ে ভালো পন্থা। বাসায় রেখে যদি প্যারালাইসিস রোগীর স্বাভাবিক জীবন ফিরে পেতে চান তবে এই পোস্টে যে বিষয়গুলোর  কথা বলা হয়েছে সেগুলো যদি নিয়মিতভাবে মেনে চলেন তবে প্যারালাইসিস রোগী সম্পন্নভাবে সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।

স্ট্রোক পরবর্তী রোগীর শারীরিক ক্ষতি

আমরা জানি যখন ব্রেন স্ট্রোক হয় তখন মানুষের অঙ্গ অবশ হয়ে যায়। এক্ষেত্রে ব্রেনের যদি ডান দিকে স্ট্রোক হয় তবে বডির বাম দিকে প্যারালাইসিস হয়, আবার যদি ব্রেনের বাম দিকে স্ট্রোক হয় তবে বডির ডান দিকে প্যারালাইসিস হয়। আর যদি স্পাইনাল কোর্ড কোন ভাবে ড্যামেজ হয় তবে মানুষের দুই হাত এবং দুই পা দুটোই অবশ হয়ে যায় অর্থাৎ হাত পা সবগুলোই প্যারালাইজড হয়ে যায়।

প্যারালাইসিস রোগীর থাকার জায়গা

স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসার পরে বাসায় নিয়ে এসে সুন্দর পরিবেশে রাখার ব্যবস্থা করতে হবে। এমন জায়গায় রাখতে হবে যেন রোগীর ব্রেনে কোন প্রেসার না পরে। যেমন পরিচ্ছন্ন কোন ঘরে রাখতে হবে এবং পরিবেশটা অনেক সুন্দর হতে হবে। যেমন পাশাপাশি বাথরুম থাকতে হবে, বিকট কোনো শব্দ যেন না হয়। রোগীকে অবশ্যই মানসিক প্রশান্তির মধ্যে রাখতে হবে। রোগীর শারীরিক পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার জন্য একটি আয়া ও নিয়োগ দিতে পারেন।


প্যারালাইসিস রোগীর হাতের ব্যায়াম

যদি হাতটি আগের মতো করে ফিরে পেতে চান তাহলে হাতের কিছু ব্যায়াম আছে যেগুলো করতে হবে। এক্ষেত্রে যে হাতটি অবশ হয়ে গেছে রোগী শুয়ে থাকা অবস্থায় সে হাতের নিচে বালিশ দিয়ে রাখতে হবে। সর্বদা মনে রাখতে হবে কখনো হাতটি সামনের দিকে টানাটানি করা যাবে না। রোগীকে যদি বসানো প্রয়োজন হয় তবে অবশ হাতটির পিছনে ধরে বসাতে হবে। এ নিয়ম মেনে যদি আপনি সঠিকভাবে ব্যায়াম করতে পারেন তবেই রোগী আগের মত হয়ে যাবে। নিচে কিছু ব্যায়াম আলোচনা করা হলো:

১। রোগী শোয়া অবস্থায় হাতটা সোজা করে ঠিক পিছনের দিকে বাঁকিয়ে সহনীয় মাত্রায় চাপ দিতে হবে।এভাবে 10 সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে মোট ১০ বার করতে হবে দিনে পাঁচ থেকে সাত বার ব্যায়াম করবেন।

২। এবার হাতটা পাঁজরের দিক থেকে ঠিক পিছনদিকে সহনীয় মাত্রায় চাপ দিয়ে ১০ সেকেন্ড ধরে রাখতে হবে এভাবে দশবার দিনে পাঁচ থেকে সাত বার।

৩। হাতটাকে সোজা রেখে কনুইটাকে বাকিয়ে সহনীয় মাত্রায় ধরে রাখতে হবে 10 সেকেন্ড এভাবে দশবার।

৪। এবার হাতের আঙ্গুল গুলোকে উল্টো দিকে সহনীয় মাত্রায় চেপে ধরে রাখতে হবে 10 সেকেন্ড প্রতিবারই ১০ সেকেন্ড করে ধরে রাখলে ভালো হয় এভাবে দশবার করতে হবে। আর দিনে ৫ থেকে ৭ বার। সেই সাথে আঙ্গুলগুলোকে ধরে ডানে বামে ভাজ করে ১০ সেকেন্ড করে ধরে রাখতে হবে।

৫। বৃদ্ধা আঙ্গুলটাকেও উল্টা দিকের সহনীয়মাত্রায় চেপে ধরে রাখতে হবে 10 সেকেন্ড করে দশবার।

৬। আঙ্গুলের প্রতিটা জয়েন্ট গুলোকে ১০ সেকেন্ড করে ডানে বামে ঘুরিয়ে ধরে রাখতে হবে।

এই ব্যায়ামগুলো যদি সঠিক নিয়মে করা হয় তাহলে অবশ পেশিগুলো আস্তে আস্তে সচল হতে শুরু করবে।

প্যারালাইসিস রোগীর পায়ের ব্যায়াম


হাতের মতোই পায়ের ক্ষেত্রে ও সামনের দিকে পা টানাটানি করা যাবে না। এই ব্যায়াম যদি সঠিকভাবে মেনে চলতে পারেন তবে রোগী আগের মতো ভালো হয়ে যাবে।পায়ের ক্ষেত্রে যে ব্যায়ামগুলো করা অতীব জরুরি।

১। চিৎ হয়ে শুয়া অবস্থায় সামনের দিকে হাঁটু বাঁকিয়ে ঠিক বুকের কাছে নিয়ে হালকা করে চেপে ধরে দশ সেকেন্ড পর্যন্ত রাখতে হবে এভাবে দশবার।

২। হিপ এবং নী টাকে ৯০ ডিগ্রি বাঁকিয়ে লেটারাল রোটেশন এবং মিডিয়াল রোটেশন নিয়ে প্রতিবাদ ১০ সেকেন্ড করে ধরে রাখতে হবে। এক্ষেত্রে রোগীর দিকে খেয়াল রাখতে হবে যেন রোগী ব্যথা না পায়।

৩। রোগী চিৎ হয়ে শুয়ে থাকা অবস্থায় অবশ পা টাকে ডানদিকে যতদূর পর্যন্ত সহনীয় মাত্রায় নেয়া যায় এবং বাম দিকে যতদূর পর্যন্ত সহনীয় মাত্রায় নেয়া যায় এভাবে প্রতিবারে দশ সেকেন্ড করে ধরে রাখতে হবে।


৪। পা সোজা রেখে পায়ের পাতা এবং হাঁটুটাকে ধরে যতদূর পর্যন্ত ডানে এবং বামে ঘুরানো যায় সহনীয় মাত্রায় এভাবে দশ সেকেন্ড করে ধরে রাখতে হবে।

৫। এবার পায়ের পাতাটাকে শুয়ে থাকা অবস্থায় সামনের দিকে চাপ দিয়ে ১০ সেকেন্ড করে এবং পিছনের দিকে চাপ দিয়ে ১০ সেকেন্ড করে ধরে রাখতে হবে।

৬। পায়ের আঙ্গুল গুলো সামনে পিছনে ১০ সেকেন্ড করে চাপ দিয়ে ধরে রাখতে হবে দশবার।


প্যারালাইসিস রোগীকে যে খাবার দিবেন


খাবার দেয়ার ক্ষেত্রে অবশ্যই রোগীর বিভিন্ন দিক বিবেচনায় আনতে হবে। যেমন রোগী হাই প্রেসার বা লো প্রেসারে আছে কিনা, ডাইবেটিস আছে কিনা, রোগী মোটা কিনা এভাবে বিভিন্ন দিক বিবেচনায় নিয়ে খাবারের তালিকা করতে হবে। সেক্ষেত্রে প্রোবায়োটিক জাতীয় খাবার প্যারালাইসিস রোগীর জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

প্রথমত প্রোবায়টিক খাদ্যের প্রধান হচ্ছে- দই, দই এ প্রচুর পরিমাণে প্রোবায়টিক থাকে যা প্যারালাইসিস রোগের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।

দ্বিতীয়ত রয়েছে কলা,  যা প্রি বায়োটিক হিসেবে রোগীকে দেয়া যায়। গুড ব্যাকটেরিয়া তৈরিতে কলা সাহায্য করে থাকে।

তৃতীয়ত রয়েছে ভিটামিন ডি জাতীয় খাবার এক্ষেত্রে রোগীকে সকালের রোদে রাখতে পারেন।
পাশাপাশি সামুদ্রিক মাছ, মাশরুম, কড লিভার তেল যুক্ত খাবার, এভাবে বিভিন্ন সোর্স থেকে ভিটামিন ডি পেতে পারেন।

চতুর্থ  এক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শে ভিটামিন ডি ট্যাবলেট সরাসরি খেতে পারবেন।

পঞ্চম  এছাড়া রসুন একটি স্ট্রোক প্রতিরোধক হিসাবে কাজ করে যা প্যারালাইসিস রোগীর জন্য খুবই ভালো একটি খাদ্য।

শেষ কথা


পরিশেষে বলা যায় স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসেস্ট রোগীকে নিজের মতো করে যত্ন করতে হবে কেননা বিভিন্ন প্রেসারের কারণে দ্বিতীয়বার স্ট্রোক করার সম্ভাবনা থেকে যায়। তাই যেন প্রেসেন্ট সবসময় মানসিক প্রশান্তিতে থাকে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। আর যদি সঠিকভাবে সঠিক নিয়মে চিকিৎসকের পরামর্শ অনুসারে যদি সেবা নেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে রোগীর দ্রুত সরে উঠবে।



এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url