নিয়মিত পান্তাভাত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ২০টি তথ্য

 

নিয়মিত পান্তাভাত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ২০টি তথ্য যদি আপনারা জানতে চান তাহলে এই পোস্টটি মনোযোগ সহকারে পড়বেন।  আজকে আমি এমন একটা খাবার নিয়ে আলোচনা করব। আধুনিক মানুষ সেটাকে খাবারই মনে করে না। তা হলো পান্তা ভাত। যা অতি সাধারণ একটি খাবার।

কিন্তু এর যে বিশেষ বৈশিষ্ট্য থাকতে পারে তা অনেকেরই জানা নেই। আপনি জেনে বিস্মিত হবেন যে, পান্তা ভাত কত উপকারী একটি খাবার। আজকে আমার এই পোষ্টে পান্তা ভাতের রহস্যময় উপকারির কথা আপনাদেরকে জানাবো, যা জানার পর আপনার পান্তা ভাত সম্পর্কে ভুল ধারণা গুলো দূর হয়ে যাবে।

পেজ সূচিপত্র: নিয়মিত পান্তাভাত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে ২০টি তথ্য 

ভূমিকা:

নিয়মিত পান্তাভাত খাওয়ার উপকারিতা সম্পর্কে জেনে আপনার অনেক ভালো লাগবে। বাঙালির অনেক ভাবেই পরিচয় রয়েছে। তার মধ্যে অন্যতম একটি হল মাছে ভাতে বাঙালি। আমাদের পূর্বপুরুষেরাও তিন বেলায় ভাত খেতেন। আগের যুগে এখনকার মত এত রুটি, পরোটা ছিল না তাই রাতের ভাত খাবার পরে যে অবশিষ্ট ভাত বেঁচে যেত, তা পচনের হাত থেকে রক্ষা করার জন্য, সেই ভাতে পানি ঢেলে দিয়ে রাখতেন। সকালবেলা সেটি পান্তাভাতে রূপান্তরিত হতো এবং সকালবেলায় তারা ভর্তা দিয়ে, ভাজি দিয়ে, কাঁচা মরিচ, পিঁয়াজ দিয়ে মাখিয়ে এই ভাত খেতেন। এই হচ্ছে পান্তার ইতিহাস।

বর্তমানে আমরা শহরের মানুষ,পান্তা খুব একটা খাওয়ার সুযোগ হয় না। সত্যি কথা বলতে কি পান্তাকে আমরা অবহেলায়, অনাদরে ভুলেই গেছি। শুধুমাত্র পহেলা বৈশাখ আসলে আমরা পান্তা ভাত খায়। সেই সাথে ইলিশ। তবে এখন এক শ্রেণীর মানুষ পান্তা ভাত খায় এরা হলো গ্রামের কৃষকেরা গরম কালে তাদের সকালের খাবার হল পান্তা।

আধুনিককালে পান্তা ভাতের উপর গবেষণার ফলে সেই পান্তা ভাত আবার লাইভ লাইটে উঠে এসেছে। কেন এটা লাইন লাইটে উঠে আসলো কি আছে পান্তা ভাতে চলুন জেনে নেই পান্তা ভাতের সম্পর্কে

বিজ্ঞানীরা বলেছেন পান্তা ভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে মিনারেল যেমন

  • মিনারেল
  • আইরন
  • ক্যালসিয়াম
  • ম্যাগনেসিয়াম
  • পটাশিয়াম
  • ফসফরাস এবং
  • জিংক এর মত উপাদান এছাড়া পান্তাভাতে ভিটামিনের মধ্যে রয়েছে-
  • ভিটামিন বি৬
  • ভিটামিন বি১২ 
  • ভিটামিন-কে
  • ভিটামিন ডি
  • ভিটামিন ই 

এখন গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন ভাতে কি এসব নেই? হ্যাঁ ভাবতেও এসব আছে তবে তা পরিমাণে অনেক কম। যেমন আয়রন- সাধারণত ১০০ গ্রাম ভাতে আয়রন থাকে ৩.৫ মিলিগ্রাম, ঠিক সেখানে ১০০ গ্রাম পান্তায় থাকে ৭৩.৯ মিলিগ্রাম, প্রায় ২১ গুণ বেশি। আবার ক্যালসিয়ামের ক্ষেত্রে ১০০ গ্রাম ভাতে থাকে ২১ মিলিগ্রাম, অন্যদিকে ১০০ গ্রাম পান্তা ভাতে থাকে ৮৫০ মিলিগ্রাম। প্রায় ৪০ গুন বেশি। এছাড়াও অন্যান্য উপাদানের পরিমাণও থাকে বহু গুণ বেশি।

আসলে ভাত যখন গাজন প্রক্রিয়ায় পান্তাভাতে পরিণত হয় তখন এই ধরনের রূপান্তর ঘটে। ভাতে রয়েছে একটি বিশেষ উপাদান ফাইট্রিক এসিড, এটি একটি শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভাতের এই ফাইট্রিক এসিড মানবদেহ তা ভাঙতে পারেনা। এই ফাইটিক এসিড আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম ও জিংকে ধরে রাখে এবং শোষণ করতে বাধা দেয়। তাতে কি হচ্ছে? এই উপাদানগুলো শরীরে শোষিত হতে পারছে না।

কিন্তু আপনি যখন ভাতকে পান্তা ভাতে রূপান্তরিত বা রূপ দিচ্ছেন তা গাজন প্রক্রিয়ায় ফাইটিক এসিড দুর্বল হয়ে যায়। ফলে ওইসব উপাদান খুব দ্রুত শোষিত হয় এবং রক্তে মিশে যায়। পান্তাভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে উপকারী ব্যাকটেরিয়া যাকে বলা হয় প্রবায়োটিকস যা সাধারণত দই এ পাওয়া যায়। পান্তাভাতে রয়েছে বিটা সিটেস্টেরল ও কম্পেস্টেরল এর মত মেটাবলাইটস যা শরীরকে প্রদাহ থেকে রক্ষা করে।

আমরা জানি ফ্যাটি লিভার, ডায়াবেটিস, জন্ডিস, হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ এই রোগ গুলোর প্রধান কারণ হল ক্রনিক ইনফ্লামেশন বা প্রদাহ। এই পান্তা ভাত এই প্রদাহ প্রতিরোধ করতে সাহায্য করে বলে আপনি এই রোগগুলো থেকে অনেকাংশই মুক্তি পাবেন। পান্তায় রয়েছে ফ্যাভোনয়েডস যা দেহকে ক্যান্সার থেকে রক্ষা করে। ক্যান্সার নিরাময়ে পান্তাই হতে পারে একটি নির্ভরযোগ্য হাতিয়ার।

পুষ্টির উৎস হিসেবে পান্তাভাতের ব্যবহার

পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে রয়েছে পুষ্টির উচ্চ হিসেবে পান্তা ভাতের ব্যবহার।সাধারণ ভাতের চাইতে গাজানো প্রক্রিয়ার তৈরি ভাত অনেক পুষ্টিগুণে ভরপুর। পান্তা ভাতে উপস্থিত  ল্যাকটিক এসিড ব্যাকটেরিয়া খাদ্যটিকে আরো পুষ্টিকর করে তুলে। যার ফলে পান্তা ভাতে অধিক পরিমাণে পুষ্টি পাওয়া যায়। এছাড়া পান্তাভাতে রয়েছে ভিটামিন ডি, ভিটামিন ই এবং বিভিন্ন মিনারেল। যেমন ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম ইত্যাদি পাওয়া যায়। সুতরাং বলা যায় পান্তা ভাতই হচ্ছে সর্বোচ্চ পুষ্টির উৎস।

আরো পড়ুন: বাচ্চাদের সাঁতার শেখার ১০ টি নিয়ম 

জলহীনতা দূর করতে পান্তাভাতের ভূমিকা

পান্তা ভাতের আরেকটি উপকারী দিক হচ্ছে শরীরের জলহীনতা দূর করা।গ্রামের শ্রমজীবী মানুষ গরমকালে কাজ করার সময় তাদের শরীরে থেকে পানি বের হয়ে ডিহাইড্রেশন হওয়ার অবস্থায় চলে যায়। তখন তারা বিভিন্ন ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হয়। সে ক্ষেত্রে শরীরে ডিহাইড্রেশন রোধ করতে পান্তা ভাত একটি উপদেয়। এই পান্তা ভাত শরীরে পর্যাপ্ত পরিমাণ পানির যোগান দেয়। যার ফলে অতিরিক্ত গরমেও ডিহাইডেশন প্রতিরোধ করতে সক্ষম হয়।

শরীরে শীতলতা প্রদানে পান্তাভাতের ভূমিকা

নিয়মিত পান্তা ভাত খাওয়ার উপকারিতার মধ্যে রয়েছে শরীর শীতল রাখার মতো একটি বিষয়।গরমকালে বিশেষ করে বৈশাখ-জ্যৈষ্ঠ মাসে মানুষের যখন গরমের তাপে জীবনযাত্রার ব্যাঘাত ঘটে এবং জীবন অতিষ্ঠ হয়ে ওঠে, তখন মানুষ গরম থেকে বাঁচার জন্য বিভিন্ন পন্থা অবলম্বন করে থাকে। বিশেষ করে গ্রামের মানুষেরা যখন কৃষি কাজের জন্য মাঠে-ঘাটে কাজ করে তখন তারা এই শরীরকে শীতল রাখার জন্য পান্থা ভাত খায়। এই পান্তা ভাত শরীরকে শীতল রাখতে সহায়তা করে। নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে শরীরের তাপমাত্রা নিয়ন্ত্রণ করতেও পান্তা ভাতের ভূমিকা অপরিসীম।

হজমে সহায়ক হিসাবে পান্তাভাতের ব্যবহার

নিয়মিত পান্তা ভাত খাওয়ার আরেকটি উপকারী দিক হচ্ছে হজমে সাহায্য করা। আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যাদের শরীরের ইমিউনিটি কমে যাওয়ার ফলে খাবার হজম করার ক্ষমতা অনেকটা কমে যায়। সে ক্ষেত্রে তারা যদি নিয়মিত পান্তা ভাত খায় তাহলে তাদের হজম শক্তি বৃদ্ধি পায়। কেননা ফরমেনটেশন প্রক্রিয়ায় উৎপন্ন ব্যাকটেরিয়া হজমে সহায়ক হিসাবে কাজ করে এবং হজম শক্তি বাড়াতে সাহায্য করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট হিসাবে পান্তাভাত

পান্তা ভাতের আরেকটি উপকারী দিক হচ্ছে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যুক্ত খাবার হচ্ছে এই পান্তা ভাত। পান্তা ভাতের গুনাগুন সম্পর্কে আমরা অনেকেই জানতাম না। পান্তাভাতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট এফেক্ট। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীর থেকে ফ্রি-রেডিক্যাল গুলো বের করে দিয়ে শরীরকে বিষমুক্ত রাখতে সহায়তা প্রদান করে। পান্তা ভাত খেতে কখনোই অবহেলায় করবেন না। পান্তাভাতে রয়েছে এন্টিঅক্সিডেন্ট গুণ যা আপনাকে বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্ত রাখবে।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পান্তাভাত

নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে পারে এই পান্তা ভাত। দীর্ঘদিন ধরে যারা কোষ্ঠকাঠিন্য ভুগে, কোনোভাবেই এই কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করা সম্ভব হচ্ছে না, তারা যদি নিয়মিত পান্তা ভাত খায় তাহলে তাদের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর হয়ে যাবে। কেননা পান্তাভাতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার, এই ফাইবার খাবার হজম করতে সহায়তা করে এবং মালটাকে নরম করে কোষ্ঠকাঠিন্যর হাত থেকে রক্ষা করে।

শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে পান্তাভাতের ব্যবহার 

পান্তা ভাতের গুরুত্বপূর্ণ উপকারী দিক হচ্ছে শরীরের ইমিউনিটি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। আপনারা জানেন ইমিউনিটি সিস্টেম দুর্বল হয়ে গেলে মানুষ বিভিন্ন ধরনের রোগে আক্রান্ত হয়ে থাকে। এবং অল্পতেই বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। যেমন শীতকালে অনেকেই ঠান্ডা এবং সর্দি বা কাশি জনিত কারণে ভোগে থাকেন।

এর কারণ হচ্ছে শরীরের ইমিউনিটি অনেক দুর্বল হয়ে গেলে এই ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। নিয়মিত পান্তাভাত যদি খাওয়া যায় তাহলে এটি শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেমের কার্যক্ষমতা কে বাড়িয়ে দেয়।

ইনফ্লামেশন দূর করতে পান্তাভাত

পান্তা ভাতের আরেকটি উপকারী দিক হচ্ছে শরীরের ইনফ্লামেশন এবং দূর করে এই পান্তা ভাত। আমাদের শরীরের ভিতরে কিছু কিছু ইনফ্লামেশন সৃষ্টি হয় যা আমরা বুঝতে পারি না বা ধরতে পারি না। এই ধরনের অজানা ইনফরমেশন রোধ করতে পান্তা ভাতের ভূমিকা অনেক রয়েছে। কেননা ফরমান ট্রেড খাবার আন্টি ইনফ্লামেটরি গুণ সমৃদ্ধ হয় যা ইনফ্লামেশন কমাতে সাহায্য করে। এক কথায় পান্তা ভাত শরীরের অভ্যন্তরীণ ইনফরমেশন কে দূর করতে সহায়তা করে।

হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পান্তাভাত

নিয়মিত পান্তা ভাত খাওয়ার সবচেয়ে বড় উপকারী দিক হচ্ছে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে পারে। আমাদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন যাবত হৃদরোগ শরীরে পুষিয়ে রেখেছেন। এটা একটি মারাত্মক রোগ। যেকোনো সময় একটি দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। এই হৃদরোগ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য আপনি পান্তা ভাত নিয়মিত খেতে পারেন। পান্তা ভাতে প্রচুর পরিমাণে পটাশিয়াম থাকার কারণে হৃদরোগের মত মারাত্মক রোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।

ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে পান্তাভাতের ভূমিকা

ডায়াবেটিসের মতো রোগের নিয়ন্ত্রণেও পান্তা ভাত উপকার করে থাকে।কোন খাবার খেলে ডায়াবেটিসের রোগীদের জন্য ক্ষতিকর হবে, আর কোন খাবার খেলে ডাইবেটিস রোগীদের জন্য উপকার হবে, তা নির্ভর করে খাদ্যের গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর উপর। যে খাদ্যে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স এর পরিমাণ কম সেই খাদ্য ডায়াবেটিস পেশেন্টের জন্য খুবই ভালো। পান্তা ভাতে গ্লাইসেমিক ইনডেক্স কম হওয়ার কারণে এটি ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।

রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে ও নিরাময়ে পান্তাভাত

রক্তস্বল্পতা প্রতিরোধে ও নিরাময় পান্তাভাতের উপকারীতা রয়েছে। আপনারা লক্ষ্য করবেন যে শহরের অধিকাংশ মহিলারই রক্তস্বল্পতা জনিত কারণে ভুগছে। এর কারণ তারা পান্তা ভাত খায় না। দই এবং লাল চালের বদলে তারা সাদা চালের ভাত খায়। এ কারণে তাদের শরীরে আয়রন একেবারেই থাকে না। পান্তাভাতে প্রচুর পরিমাণে আয়রন রয়েছে এক্ষেত্রে আপনি লাল চালের পান্তা ভাত খাবেন এতে শরীরের আয়তনের অভাব পূরণ হবে এবং রক্তস্বল্পতা রোগ থেকে মুক্তি পাবেন।

পান্তাভাতের প্রোবায়োটিকস এর ভূমিকা

নিয়মিত পান্তা ভাত খাওয়ার ফলে এটি প্রবায়োটিকসের মত উপকার করে থাকে। পান্তা ভাতে যে পরিমাণ প্রোবায়োটিকস থাকে তা দই বাধিত আর কোন খাবারে নেই। পান্তা ভাত প্রবায়োটিক সমৃদ্ধ হওয়ায় অন্ত্রের স্বাস্থ্যের জন্য খুবই ভালো। এটা অন্ত্রের ভালো ব্যাকটেরিয়ার সংখ্যা বাড়ায় এবং ক্ষতিকর ব্যাকটেরিয়া কমাতে সহায়তা করে। পাশাপাশি এই প্রোবায়োটিকস থাকার জন্য শরীরের ইমিউনিটি সিস্টেম বা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে শক্তিশালী করে। সেইসাথে খাবার হজমেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

শরীরকে সতেজও ছন্দময় রাখতে পান্তাভাতের ভূমিকা

আরেকটি উপকারী দিক হচ্ছে এটি শরীরকে সতেজ ও ছন্দময় রাখে। পান্তাভাতে রয়েছে পর্যাপ্ত পরিমাণ মিনারেল। আমাদের এই শরীরে, যে কাজ করবে এতে যদি পর্যাপ্ত পরিমাণ পটাশিয়াম, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম না থাকে তাহলে শরীর ক্লান্ত হয়ে পড়বে। এক্ষেত্রে এই মিনারেলগুলো শরীরে উপস্থিত থেকে শরীরের ভারসাম্য বজায় রাখে। সহজে হজম হওয়ার কারণে পান্তাভাতের কার্বোহাইড্রেট খুব দ্রুত এনার্জি প্রদান করে এবং শরীরকে সতেজ রাখে।

অনিদ্রা দূর করতে পান্তা ভাতের ব্যবহার

অনিদ্রা দূর করতেও পান্তা ভাতের ভূমিকা অনেক। আপনি কি অনিদ্রা জনিত কারণে ঘুরছেন? নিয়মিত পান্তা ভাত খেয়ে দেখুন আপনার সমস্যা দূর হয়ে যাবে এবং একবার রাতে ঘুমালে, ঘুম ভাঙ্গার সম্ভাবনা খুবই কম থাকবে সকাল হওয়া পর্যন্ত।ফরমেন্টেশন প্রক্রিয়ায় যখন পান্তাভাত তৈরি হয় তখন তার কিছুটা অ্যালকোহল হয়ে যায়। আর এই অ্যালকোহল আপনার ঘুম ঘুম ভাব এনে দেবে।

ত্বকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে পান্তাভাতের ব্যবহার

হকের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতেও পান্তা ভাত উপকার করে থাকে। অনেকেরই ঋতু ভেদে ত্বকগুলো অমসৃণ হয়ে যায়। ত্বকে বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দেখা দেয়। এতে করে তারুণ্য ধরে রাখা কঠিন হয়ে যায়। অল্প বয়সেই বার্ধেকের ছাফ পরে। পান্তাভাতে থাকা ভিটামিন ও মিনারেল ত্বকের স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সহায়ক। এছাড়া পান্তাভাতে প্রচুর পরিমাণে যে কোলাজেন থাকে তা ত্বককে মলিন ও টানটান রাখে। ফলে ত্বক মসৃণ ও চকচকে হয়ে উঠে। এতে বয়স বাড়লেও তারণ্য দীর্ঘায়িত হয়।

ওজন কমাতে পান্তাভাতের ভূমিকা

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা হচ্ছে নিয়মিত পান্তা ভাত খেলে ওজন কমে যায়। অধিক পরিমাণে ভাত খাওয়ার কারণে মানুষের ওজন বাড়তে দেখা যায় এর কারণ হচ্ছে ভাতে প্রচুর পরিমাণে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাট রয়েছে। অপরদিকে গাজন প্রক্রিয়ার ফলে পান্তাভাতে কার্বোহাইড্রেট ও ফ্যাটের পরিমাণ কমে যায়। যার ফলশ্রুতিতে প্রতিদিন পরিমিত পরিমান পান্তাভাত খেলে তার শরীরের ওজন কমাতে সাহায্য করে।

হার মজবুত করতে পান্তাভাতের ভূমিকা

আর মজবুত রাখতেও পান্তা ভাত ভূমিকা রাখে। সাধারণ ভাতের চাইতে পান্তাভাতে ক্যালসিয়ামের পরিমাণ অধিক থাকায়, ক্যালসিয়াম হার মজবুত করতে বিশেষ ভূমিকা রাখে। দীর্ঘদিন ধরে যারা হাড়ের ব্যথায় বা সমস্যায় ভুগছেন তারা যদি নিয়মিত পান্তাভাত খান তাহলে হাড়ের সমস্যা দূর হবে এবং হার মজবুত হবে।

পান্তা ভাতের অপকারি দিক

এখন প্রশ্ন হচ্ছে, এর কোন অপকারিতা নেই? বা ক্ষতিকর দিক নেই? মজার বিষয় হচ্ছে এখন পর্যন্ত বিজ্ঞানীরা পান্তাভাতের ক্ষতিকর দিক বের করতে পারে নাই। তবে যদি আপনি ভাতকে ১৪ থেকে ১৬ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখেন, এতে দীর্ঘ সময় পাচন প্রক্রিয়া ঘটে ফলশ্রুতিতে পান্তা ভাত অ্যালকোহলে পরিণত হবে। এক্ষেত্রে সেই পান্তাভাত খেলে শরীরে ম্যাশ ম্যাশ করবে, ঘুম ঘুম ভাব হবে, নেশা হবে। আপনি যদি নির্দিষ্ট সময় ধরে পান্তা তৈরি করেন তবে তা ক্ষতির কারণ হবে না। এক্ষেত্রে আপনাকে রাতের বেলায় যে সময় ভিজিয়ে রাখবেন তখন থেকে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখতে হবে। তা না হলে পান্তাভাত ক্ষতির কারণ হতে পারে।

পান্তাভাত তৈরীর নিয়ম

প্রথমে লাল চালের ভাত রান্না করুন তারপর সন্ধ্যা সাতটার দিকে ভাত ঠান্ডা হবার পর তাতে পরিমাণ মতো পানি দিন। এভাবে ১২ ঘন্টা ভিজিয়ে রাখুন। এতে পানি এবং ভাতের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়া ঘটবে। ভাত পানির নিচে থাকার কারণে বাতাসের সংস্পর্শে আসতে পারে না। এতে এনারবিক ফরমেনটেশন ঘটে, এই প্রক্রিয়ার ফলে ভাত হতে কার্বোহাইড্রেট ভেঙে যায় এবং পান্তাভাতে রূপান্তরিত হয়।

শেষ কথা

গ্রামের অধিকাংশ গৃহস্থ বাড়িতে এখনো পান্তা ভাতের প্রচলন রয়েছে। শহরে জীবনে অধিকাংশ মানুষ পান্তা ভাত চিনে না বললেই চলে। তবে পান্তা ভাতের যে নানাবিধ উপকারী দিক আছে তা এই পোষ্টের জানিয়ে দেয়া হলো। আশা করি যারা পোস্টটি দেখবেন বা পড়বেন তারা এখন থেকে নিয়মিত পান্তা ভাত খাবেন।


এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url