চিয়া সিড খাবার নিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ ১০টি উপকারিতা

 

চিয়া সিড খাওয়ার নিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ উপকারিতা সম্পর্কে এই পোস্টে আমি বিস্তারিত আলোচনা করলাম। আপনি কি জানেন চিয়া সিড মানব শরীরের জন্য কতটুকু উপকারী? আমরা সবাই কমবেশি চিয়া সিড কি সেটা জানি। কিন্তু এর উপকারিতা সম্পর্কে 

আমাদের সবারই অজানা। মানবদেহের জন্য চিয়া সিড কতটা উপকারী তা আপনি চিন্তা ও করতে পারবেন না? আপনি এই পোস্ট জানতে পারবেন চিয়া সিড খেলে শরীরের কতটা উপকার হয়। চিয়া সিডের বিশেষ বিশেষ গুরুত্বপূর্ণ উপকারী দিক আমার এই পোস্টে তুলে ধরলাম।

পেজ সূচিপত্র: চিয়া সিড খাবার নিয়ম ও গুরুত্বপূর্ণ ১০টি উপকারিতা

চিয়া সিড অধিক উচ্চ পুষ্টিমূল্যের অধিকারী 

চিয়া সিড বা চিয়া বীজ অত্যন্ত পুষ্টিকর একটি খাদ্য। এর মধ্যে রয়েছে ফাইবার, প্রোটিন, ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিড এবং বিভিন্ন ভিটামিন। এছাড়াও রয়েছে খনিজ পদার্থ তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য যেমন-যেমন ক্যালসিয়াম, ফসফরাস এবং ম্যাগনেসিয়াম বিভিন্ন পুষ্টিকর উপাদান দ্বারা পরিপূর্ণ। নিচে চিয়া সিডের পুষ্টিমূল্যের কিছু মূল বিষয় তুলে ধরা হলো-

পুষ্টি মূল্য প্রতি ১০০ গ্রামে চিয়া সিড রয়েছে-

  • ক্যালোরি ৪৮৬ গ্রাম
  •  প্রোটিন ১৬.৫ গ্রাম
  •  ফ্যাট ৩০.৭ গ্রাম
  •  সাচু্রেটেড ফ্যাট ৩.৩ গ্রাম
  • মনোআনসাসুরেটেড ফ্যাট ২.৩ গ্রাম
  •  পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট ২৩.৭ গ্রাম
  • ফাইবার ৩৪.৪ গ্রাম
  • কার্বোহাইড্রেট ৪২.১ গ্রাম
  • জিংক ৪.৬ গ্রাম
  • পটাশিয়াম ৪০৭ মিলিগ্রাম
  • ম্যাগনেসিয়াম ৩৩৫ মিলিগ্রাম
  • আইরন ৭.৭ মিলিগ্রাম 
  • ক্যালসিয়াম ৬৩১ মিলিগ্রাম
  • ভিটামিন বি- ১.৬২ মিলিগ্রাম 
  • ভিটামিন বি2- 0.১৭ মিলিগ্রাম 
  • ভিটামিন বি3- ৮.৮৩ মিলিগ্রাম

উল্লেখিত পুষ্টিমানের তালিকা দেখে বোঝা যাচ্ছে চিয়া সিড এক ধরনের সুপার ফুড যা স্বাস্থ্যের উন্নতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ একটি উপাদান। দৈনন্দিন জীবনে খাদ্য তালিকায় এই চিয়া সীড অন্তর্ভুক্ত করে সুস্বাস্থ্য ও সুন্দর জীবন যাপন করা সম্ভব।

শরীরের ওজন কমাতে চিয়া সিডের ভূমিকা

আমাদের দেশে সচেতন মেয়েদের কাছে তার সৌন্দর্য ধরে রাখার জন্য চিয়া সিড একটি গুরুত্বপূর্ণ এবং জনপ্রিয় খাদ্য উপাদান। এটি বিভিন্ন পুষ্টিমানের হওয়ার কারণে এবং উচ্চ মানের গুণের কারণে ওজন কমাতে সাহায্য করে। চিয়া সিড কিভাবে ওজন কমাতে সাহায্য করে তা তুলে ধরা হলো-

উচ্চমানের ফাইবার: চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকার কারণে হজম প্রক্রিয়াকে ধীর গতি করে ফেলে। এতে অল্প পরিমাণ খাবার খেয়েও দীর্ঘ সময় ধরে পেট ভর্তির অনুভূতি পাওয়া যায়।

প্রোটিন সমৃদ্ধ: চিয়া সিড প্রোটিন সমৃদ্ধ হওয়ার কারণে এটি শরীরের পেশী গঠনেই বেশি ভূমিকা রাখে। এবং ক্ষুধা কমাতে সাহায্য করে।
হাইড্রেশন: আপনারা জানেন চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে পানি ধারণ করে রাখতে পারে। এতে করে জেলীর মত হয়ে যায় এবং পাকস্থলীর অনেকাংশ জুড়ে অবস্থান করে, যার ফলে খাওয়ার পরিমাণ কমে যায়।
লো ক্যালোরি: চিয়া সিডে ক্যালরির পরিমাণ কম হলেও পুষ্টিমান উচ্চ। এটি ওজন কমাতে সাহায্য করে। কারণ এটি প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করে এবং অতিরিক্ত ক্যালরি যোগ করতে বিরোধিতা করে।

রক্তে শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণ: চিয়া সিড খাওয়ার ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা স্থির থাকে।যার ফলে ওজন কমাতে সাহায্য করে। 

এছাড়াও চিয়া সিড ব্যবহার করে ওজন কমানোর বেশ কিছু পদ্ধতি রয়েছে। যেমন-

চিয়া পানীয়: পানির সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খান।

স্মুদি: আপনার প্রতিদিনের ফল বা সবজির সাথেও মিশে খাওয়া যায়।

দই: দইয়ের সাথে চিয়া সিড মিশালে একটি স্বাস্থ্যকর খাবার তৈরি হয়।

সত্যি কথা বলতে চিয়া সিড স্বাস্থ্য কমাতে সহায়ক হতে পারে তবে এর সাথে যদি আপনি সঠিক খাদ্যাভাস এবং ব্যায়াম করার অভ্যাস তৈরি করেন। তবে আপনার স্বাস্থ্য দিন দিন কমতে থাকবে। আবার অতিরিক্ত চিয়া সিড খাওয়া ঠিক নয়, এতে অন্ত্রের সমস্যা সৃষ্টি করে। সবকিছুই পরিমিত পরিমাণ এবং সামঞ্জস্যপূর্ণ খাদ্যাভাস তৈরি করা ভালো।

হৃদপিন্ডের স্বাস্থ্যের উন্নতির ক্ষেত্রে চিয়া সিড

হৃদযন্ত্র ভালো রাখার একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হচ্ছে চিয়া সিডে। এতে প্রচুর পরিমানের স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে। এসবের মধ্যে প্রধান উপাদান গুলো হল-

ওমেগা থ্রি ফ্যার্টি এসিড: এতে প্রচুর পরিমাণে ওমেগা থ্রি ফ্যাটি এসিট থাকার কারণে এটি হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে। কেননা  এটি খারাপ কোলেস্টেরলকে কমিয়ে ভালো কোলেস্টেরলের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় এবং পাশাপাশি প্রদাহ কমাতেও সাহায্য করে।

ফাইবার: চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার থাকে যা রক্তের কোলেস্টেরলের ভারসাম্য বজায় রাখে। এছাড়া ফাইবার রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণেও ভূমিকা পালন করে।

প্রোটিন: চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। এই প্রোটিন শরীরের পেশির গঠনে এবং রক্ষণাবেক্ষণ এর কাজে সাহায্য করে থাকে। পাশাপাশি প্রোটিন শরীরের মেটাবলিজমকে ও সাহায্য করে এবং ওজন নিয়ন্ত্রণ রাখতে সাহায্য করে।

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টস: চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা শরীরের ফ্রি রেডিকেল গুলোকে মুক্ত করে এবং কোষগুলোকে বিষক্রিয়া থেকে রক্ষা করে।

মিনারেল: প্রচুর পরিমাণে মিনারেল রয়েছে চিয়া সিডে। যেমন- পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, ক্যালসিয়াম যা কিনা হৃদযন্ত্রের কার্যক্ষমতা কে অক্ষুন্ন রাখতে সাহায্য করে।

আরো পড়ুন: পান্তাভাতের ২০টি রহস্যময় উপকারিতা

অ্যান্টিঅক্সিডেন্টে সমৃদ্ধ চিয়া সিড

চিয়া সিডে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় তা শরীরের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কেননা এই অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট এমন একটি যৌগ শরীরের ফ্রী রেডিক্যালস নামক ক্ষতিকর পদার্থ। যা শরীরের ক্ষতি করে। তা প্রতিরোধ করে অন্যান্য ক্রনিক রোগের ঝুঁকি এড়াতে সাহায্য করে। ফ্রী রেডিক্যালস হল অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কারণ যা ক্যান্সার, হৃদরোগ, ডায়াবেটিস এবং অন্যান্য ক্রনিক রোগের ঝুঁকি বাড়ায়।

চিয়া সিডের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেভাবে কাজ করে:

ফ্রি রেডিক্যাল নিরোধে: চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ফ্রি রেডিকেল গুলোকে নিরোধ করে এবং অক্সিডেটিভ স্ট্রেসের কার্য ক্ষমতা কমিয়ে দেয়। এর ফলে তারা কোষের ক্ষতি প্রতিরোধ করে।

প্রদাহ কমাতে: অনেক রোগের মূল কারণ হচ্ছে প্রদাহ, এই প্রদাহ কমাতেও অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট ভূমিকা রাখে।

কোষের সুরক্ষায়: অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট কোষের ডিএনএ এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ উপাদান গুলোকে ক্ষতির হাত থেকে বাঁচায়। যার ফলে কোষের স্বাস্থ্য ভালো থাকে এবং নতুন কোষ উৎপাদনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

বার্ধক্যের গতি ধীর করা: চিয়া সিডে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট বয়স জনিত বিভিন্ন সমস্যার সমাধান করে থাকে। যেমন ত্বকে বয়স জনিত বিভিন্ন লক্ষণ দেখা দেয় তা কমাতে সাহায্য করে। 

চিয়া সিডে রয়েছে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যেমন ক্লোরোজেনিক এসিড, কফিক এসিড এবং কমফেরল। এই গুলো মানবদেহের বিভিন্ন অঙ্গ এবং কোষে কাজ করার মাধ্যমে স্বাস্থ্য ভালো রাখতে সাহায্য করে।

হজম ক্ষমতা বাড়াতে চিয়া সিড ব্যবহার

চিয়া সিডের স্বাস্থ্য উপকারিতা অনেক তার মধ্যে একটি হচ্ছে হজম ক্ষমতার উন্নতি। হজম ক্ষমতার উন্নতিতে চিয়া সিড কিভাবে কাজ করে জেনে নিন-

উচ্চ ফাইবার কনটেন্ট

চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবার। এতে দ্রবণীয় এবং অদ্রবনীয় দুই ধরনেরই ফাইবার রয়েছে। যা হজমের কার্যক্ষমতা কে বাড়াতে সাহায্য করে।

দ্রবনীয় ফাইবার পানি শোষণ করে এবং তা জেলির মত হয়ে যায়। এই পদার্থটি তখন হজম প্রক্রিয়াকে ধীরগতি করে এবং মলকে নরম করে। মল নরম হওয়ার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হওয়ার সম্ভাবনা কেটে যায়।

অদ্রবনীয় ফাইবার অন্ত্রের গতিবিধি বৃদ্ধিতে সাহায্য করে এবং খাদ্যেকে দ্রুত পাচনতন্ত্রের মধ্য দিয়ে যাওয়ার জন্য সহায়ক।

প্রি বায়োটিক প্রভাব: চিয়া সিডে থাকা ফাইবার প্রিবায়োটিক হিসেবে কাজ করতে পারে। যা অন্ত্রের স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। স্বাস্থ্যকর ব্যাকটেরিয়া আবার অন্ত্রের স্বাস্থ্য এবং সামগ্রিক পচন প্রক্রিয়াকে উন্নত করতে সাহায্য করে।

এন্টিঅক্সিডেন্ট এবং অ্যান্টি ইনফ্লামেটরি প্রভাব: চিয়া সিডে প্রচুর এন্টিঅক্সিডেন্ট থাকার কারণে অন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। প্রদাহ পচনতন্ত্রের বিভিন্ন সমস্যার একই প্রধান সমস্যা হতে পারে যেমন ইরিটেবল বাওয়েল সিন্ড্রোম(IBS)।

ওমেগা থ্রি ফাটি এসিড:চিয়া সিডে থাকা ওমেগা থ্রি ফাটি আসিট অন্ত্রের প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এটি পচন প্রক্রিয়াকেও মসৃণ এবং আরামদায়ক রাখতে সাহায্য করে।

জলের শোষণ ক্ষমতা:চিয়া সিডের প্রধান বৈশিষ্ট্য হচ্ছে জল শোষণ করার ক্ষমতা, তার ওজনের চেয়ে প্রায় ১০.১২ গুণ বেশি জল ধারণ করে। এটি একটি জেলির ন্যায় হয়ে থাকে যা অন্ত্রের গতিবিধি সহজ করে এবং পচন প্রক্রিয়াকে মসৃণ করে।

চিয়া সিড হজমের ক্ষেত্রে দারুন ভূমিকা পালন করতে সক্ষম। তবে তা নিয়মিত পরিমাণই খেতে হবে এক্ষেত্রে লক্ষ্য রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত মাত্রায় কেউ না খায়। এতে বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হতে পারেন। যেমন পেটফোলা ভাব বা গ্যাস। এজন্য খাবার সময় প্রথমে অল্প পরিমাণে শুরু করে ধীরে ধীরে বাড়ানো উচিত। এক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে পানি খেতে হবে।

আরো পড়ুন: সকালে কাঁচা বাদাম খাওয়ার গুরুত্বপূর্ন ১৫টি উপকারিতা

হাড়ের স্বাস্থ্যের জন্য চিয়া সিডের ভূমিকা

চিয়া সিড হাড়ের স্বাস্থ্য ভালো রাখে। আসুন জেনে নেইচিয়া সিকি পরিমান পুষ্টিগুণ রয়েছে যা হাড়কে শক্তিশালী ও ভালো রাখতে সাহায্য করে। এই উপাদান গুলোর মধ্যে হলো- 

ক্যালসিয়াম- চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে ক্যালসিয়াম রয়েছে যা হারের গঠনের প্রধান উপাদান হিসেবে বিবেচিত। এছাড়া এই ক্যালসিয়াম হাড়ের ঘনত্ব এবং শক্তি বাড়াতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা রাখে।

ফসফরাত- চিয়া সিডে রয়েছে ফসফরাস যা ক্যালসিয়ামের সাথে মিলিত হয়ে হাড়ের গঠনকে উন্নত করতে সাহায্য করে।

ম্যাগনেসিয়াম-  চিয়া সিডে থাকা ম্যাগনেসিয়ামের কাজ হচ্ছে হারকে গঠন করা এবং হাড়ের কার্যকারিতা বাড়ানো এছাড়াও ম্যাগনেসিয়াম মূলত ক্যালসিয়ামকে শোষণ করতে সাহায্য করে।

প্রোটিন-  চিয়া সিডে রয়েছে প্রোটিন যা হারের কলা পুনর্গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ওমেগা থ্রি ফাটি আসিড- চিয়া সিডে প্রাপ্ত ওমেগা থ্রি ফাটি আসিড হাড়ের ক্ষয় রোধ করে এবং প্রদাহ কমিয়ে দেয়।

চিয়া সিডে এই পুষ্টি উপাদান গুলো হারকে মজবুত ও শক্ত করতে সাহায্য করে। নিয়মিত চিয়া সিডে খেলে হাড়ের বিভিন্ন ধরনের সমস্যা দূর হয়ে যায়।

রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে চিয়া সিডের ভূমিকা

চিয়া সিড রক্তের শর্করা কে ও নিয়ন্ত্রণ করতে পারে। বিশেষ করে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণে কিভাবে চিয়া সিড কাজ করে তা নিচে দেওয়া হল-

১। উচ্চমানের ফাইবার উপাদান

চিয়া সিডে রয়েছে উচ্চমানের দ্রবণীয় এবং অদ্রবণীয় উপাদান বা ফাইবার। এই ফাইবার হজম প্রক্রিয়াকে ধীরে ধীরে কমিয়ে দেয় যার ফলে রক্তের শর্করার স্তর ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পেতে থাকে।

২। গ্লুকোজের শোষণ কমায়

খাবার পর এটি একটি জেলাটিনাস সাবস্টেনন্সে পরিণত হয়। এই জেলাটিনাস পদার্থ পাকস্থলীর গ্লুকোজ শোষণে বাধা দেয়। ফলে রক্তের শর্করার মাত্রা নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখে।

৩। ওমেগা থ্রি ফাটি আসিড

চিয়া সিডে ওমেগা থ্রি ফাটি আসিড থাকায় এটি ইনর্সুর্লিন সংবেদনশীলতাকে বাড়াতে পারে। এর কারণে শরীরে ইনসুলিনের ব্যবহারের ক্ষমতা বাড়ে ফলে রক্তে শর্করা নিয়ন্ত্রণে থাকে।

৪। প্রোটিন

চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন। রক্তের শর্করা এই প্রোটিন হজমে বেশি সময় নিয়ে থাকে বলে রক্তের শর্করার মাত্রা স্থিতিশীল রাখতে সহায়তা কর।

৫। অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট

চিয়া সিডে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা দেহের কোষগুলোকে সুরক্ষা দিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং ইনসুলিন রেসিস্ট্যান্স কমাতে সাহায্য করে।

চিয়া সিডে নিয়মিত গ্রহণ করলে রক্তের শর্করা নিয়ন্ত্রণ ভালো থাকে। তবে এটি একটি স্বাস্থ্যকর জীবনধারার অংশ হিসেবে গ্রহণ করা উচিত। প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় অবশ্যই কিছু পরিমাণ চিয়া সিড রাখা অতীব প্রয়োজনীয়।

শরীরকে হাইড্রেট ও ইলেকট্রোলাইটের ভারসাম্যতায় চিয়া সিড

চিয়া সিড শরীরকে হাইড্রেট করতে এবং ইলেক্ট্রোলাইটের ভারসাম্য বজায় রাখতে বিভিন্ন ভাবে সাহায্য করে থাকে। এর বীজগুলোর মধ্যে প্রচুর পরিমাণে পুষ্টি উপাদান রয়েছে যা শরীরের জলীয় ভারসাম্য রক্ষা করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যেমন-

  • আন্টিঅক্সিডেন্ট: চিয়া সিডে প্রচুর পরিমাণে আন্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় যা কোষকে ফ্রি রেডিকালস থেকে মুক্ত করে এবং শরীরকে সতেজ রাখতে সাহায্য করে।
  • ওমেগা থ্রি ফাটি আসিড: এতে প্রচুর ওমেগা থ্রি ফাটি আসিড থাকায় শরীরের বিভিন্ন প্রদাহ কমাতে সাহায্য করে। এবং হৃদপিন্ডের সুস্থতা বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • ফাইবার: চিয়া সিডের মধ্যে রয়েছে উচ্চ মানের ফাইবার যা পরিপাক ক্রিয়া সুস্থ রাখতে ভূমিকা পালন করে এবং এর পানি শোষণ ক্ষমতা অনেক বেশি এটি শরীরের জলীয় ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
  • প্রোটিন: চিয়া সিডে প্রোটিন থাকায় শরীরের পেশি পুনর্গঠনে সাহায্য করে এবং এবং শরীরকে সুস্থ রাখতে সাহায্য করে।
  • মিনারেল: চিয়া সিডে থাকা মিনারেল যেমন- ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, পটাশিয়াম এই মিনারেলসগুলো ইলেকট্রোলাইটসের ভারসাম্য বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

অল্পতেই তৃপ্ততা এনে দিতে চিয়া সিড

চিয়া সিড মূলত একটি পুষ্টিকর খাবার যা একটি সবজির বীজ হিসাবে পরিচিত। চিয়া সিড খেয়ে তৃপ্তি অনুভব করার পিছনে কিছু কারণ রয়েছে যেমন-

  • চিয়া সিডে উচ্চ পরিমাণে প্রোটিন, ভিটামিন, মিনারেল, এন্টিঅক্সিডেন্ট ও আমাইনাে এসিড সম্মানিত যা দেহের সামগ্রিক স্বাস্থ্য উন্নতি করতে গুরুত্বপূর্ণ পালন করে। এটি খাদ্যতাত্বিক দৃষ্টিকোণ থেকে একটি প্রধান বিকল্প খাদ্য হিসাবে পরিচিতি পেতে পারে।
  • প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন এবং আমাইনো এসিড রয়েছে যা শরীরের ওজন টাকে নিয়ন্ত্রণ করতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। 
  • চিয়া সিড প্রচুর পরিমাণে পানি সংগ্রহ করে রাখতে পারে। যা অনেকক্ষণ ধরে তৃপ্ততা দিতে পারে এবং ত্বকের স্বাস্থ্য উন্নতিতে ভূমিকা রাখে।
  • অধিক মাত্রায় প্রোটিন এবং অ্যামাইনো এসিড সমন্বিত হওয়ার কারণে এটি ডায়াবেটিস রোগীদের ক্ষেত্রে রক্ত চিন্তামুক্ত রাখে এবং ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণ করতে সাহায্য করে।

অন্য খাবারের সাথে অন্তর্ভুক্ততায় চিয়া সিড

চিয়া সিড এক প্রকার পুষ্টিকর বীজ যা সাল্ভিয়া হিজপানিকা উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায়। এটি বিভিন্ন ধরনের খাবারের মধ্যে সহজেই মিশিয়ে খাওয়া যায় এবং এতে অনেক স্বাস্থ্যকর উপাদান রয়েছে যেমন ওমেগা থ্রি ফাটি আসিড, ফাইবার, প্রোটিন, ক্যালসিয়াম এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

  • চিয়া সিড সরাসরি মিশিয়ে খাওয়া যায়। যার কারণে স্মুদির পুষ্টিগুণ অনেকাংশই বৃদ্ধি পায়।
  • পুডিং বা দই অথবা মিল্ক শেখের সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়া যায়। এটি খাদ্যের গুণগতমান বাড়ায় এবং দই বা দুধের সাথে মিশিয়ে খেলে একটি ক্রাঞ্চি টেক্সচার প্রদান করে।
  • সালাদের উপরে চিয়া সিড ছড়িয়ে দিলে এটি একটি ক্রাঞ্চি এবং পুষ্টিকর উপাদান হিসেবে কাজ করে।
  • চিয়া সিড ব্রেড কেক, মাফিন বা কুকিং এর মিশ্রণের সাথে মিশিয়ে ব্যবহার করা যায়। এটি বেকিং আইটেমের পুষ্টিকর গুণ বাড়াতে সাহায্য করে।
  • ওটমিল বা পোরিজের সাথে মিশিয়ে খেলে এটি আরো পুষ্টি সমৃদ্ধ হয়ে ওঠে।
  • যেকোনো ফলের জুস বা পানীয়র সাথে চিয়া সিড মিশিয়ে খাওয়া যায় এটি পানীয়র পুষ্টিগুণ বৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে এবং সঠিক পরিমাণে স্ন্যাকস হিসাবে কাজ লাগে।
  • মিশিয়ে খাওয়া যায় বলে স্যুপের ঘনত্ব বাড়ায় এবং পুষ্টিগুণ বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখে।

শেষ কথা

চিয়া সিড বা ব চিয়া বীজ একটি সামান্য উদ্ভিদের বীজ হলেও এর গুরুত্ব অসীম। যদি সঠিক নিয়মে সঠিক মাত্রায় প্রতিদিন আপনার খাদ্য তালিকায় যোগ করতে পারেন। তবে তা সুস্বাস্থ্যের জন্য খুবই উপকারী হয়ে উঠবে। তাই আসুন প্রতিদিনের খাদ্য তালিকায় চিয়া সিড ২০ থেকে ৩০ গ্রাম করে সেবন করি এবং নিজেদের স্বাস্থ্যের প্রতি সচেতন হয়। তবে হ্যাঁ খেয়াল রাখতে হবে যেন অতিরিক্ত মাত্রায় সেবন না করা হয়, কেননা প্রত্যেকটি খাবার অতিরিক্ত খেলে এর বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক ও দেখা যায়। তাই প্রতিদিন পরিমিত পরিমাণ চিয়া সিড সেবন করুন।

এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url