বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার ১৩টি অজানা তথ্য

 

বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার অজানা তথ্য সম্পর্কে আমরা আজকে এখানে উত্থাপন করব। আমাদের অনেকের মধ্যেই বিটরুট সবজি সম্পর্কে খুব একটা ভালো জানাশোনা নেই। বিট একপ্রকার একটি সবজি। আমরা বাজারে গিয়ে অনেক ধরনের সবজি কিনলেও একটি সবজি সব সময় কেনা থেকে



বিরত থাকি। সেই সবজি হল বিট। এই বিটের গুনাগুন সম্পর্কে না জানার কারণে আমরা বিট কিনতে আগ্রহ দেখায় না। বিটের গুনাগুন অন্য যেকোনো সবজি থেকে অনেক বেশি। আপনি জেনে অবাক হবেন যে বিট সবজি এত গুনাগুন সমৃদ্ধ যা আমরা না খেয়ে অনেক মিস করেছি। আসুন জেনে নেওয়া যাক বিটে কি ধরনের গুনাগুন রয়েছে।

পেজ সূচিপত্র: বিটরুট খাওয়ার উপকারিতা ও অপকারিতার ১৩টি অজানা তথ্য

বিটরুট সম্পর্কে অজানা তথ্য

আমরা সম্ভবতই বাজারে সবজি কিনতে গেলে, বিভিন্ন ধরনের সবজি কিনলেও বিট কিনতে আগ্রহ প্রকাশ করি না। কারন বিটের গুনাগুন সম্পর্কে না জানার জন্য, কিন্তু প্রাচীনকাল থেকেই বিটের অনেক কদর রয়েছে। প্রাচীন সময়কালে গ্রীক ও রোমানরা বিভিন্ন রোগের নিরাময়ক হিসেবে বিট খেত। এর গুরুত্বপূর্ণ কারণও রয়েছে, এতে রয়েছে 

  • ভিটামিন, 
  • ম্যাগনেসিয়াম, 
  • ক্যালসিয়াম ,
  • ক্লোরিন, 
  • সোডিয়াম  সহ অনেক প্রয়োজনীয় উপাদান। এছাড়া এই বিটরুট জুস বিভিন্ন রোগ নিরাময়ের ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন
  • ডায়াবেটিস, 
  • অ্যানিমিয়া, 
  • থাইরয়েড, 
  • উচ্চ রক্তচাপ 
  • স্ট্রোক
  • হৃদরোগ
  • প্রদাহ
  • ক্যান্সার
  • হার্ট অ্যাটাকের মত অনেক রোগ নিরাময়ে অত্যন্ত কার্যকরী সবজি হল এই বিটরুট। এর খারাপ দিকের মধ্যে রয়েছে শুধু একটিমাত্র দিক,তা হল বিট খেলে প্রসবের এবং মলের রং লাল হয়, সেই সাথে শরীরের ঘাম বের হলে তা রক্ত বর্ণের হয়ে থাকে। এতে ভয় পাওয়ার কোনই কারণ নেই।

আরো পড়ুন: প্রতিদিন ঘি খাওয়ার ১১টি উপকারিতা 

রক্ত সঞ্চালন স্বাভাবিক করতে বিটের ব্যবহার

বিটে রয়েছে অধিক পরিমাণের নাইট্রেট। এই নাইট্রেট মুখের ভিতরে বসবাসকারী ব্যাকটেরিয়ার সংস্পর্শে এলে ব্রেনের রক্ত সঞ্চালন বাড়িয়ে দেয়। এতে করে ব্রেন সঠিকভাবে এবং সঠিক মাত্রায় সারা দেহে রক্ত সঞ্চালনের স্বাভাবিক গতি বজায় রাখতে সক্ষম হয়। এক কথাই শরীরের রক্ত সঞ্চালনের স্বাভাবিক মাত্রার ভারসাম্য বজায় রাখে এই বিটরুট।

লিভারকে বিষমুক্ত করতে বিটের ভূমিকা

বিলাসিতাময় জীবনে আমরা বিভিন্ন ধরনের খাবার খেতে অভ্যস্ত। যেমন ফাস্টফুড, স্পাইসি খাবারের মতো খাবার। এসব খাবার খেলে লিভারে টক্সিস হয়ে যায়। এতে লিভার সঠিকভাবে কাজ করতে পারে না। এই বিট নিয়মিত খেলে লিভার বিষমুক্ত হয়ে থাকে। বিটের রসে থাকা বিটাইন নামক একটি উপাদান। যা লিভারের থেকে বিষাক্ত পদার্থ বের করে দেয়।

মাসিক ঋতুচক্র নিয়ন্ত্রণে বিটের ব্যবহার

নির্দিষ্ট বয়সে সাধারণত মেনোপোজ হয়। যেমন বয়স ভেদে ৪৫ থেকে ৫০ বছরের মধ্যে মেনোপোজ হয়ে থাকে। যদি এই সময়ের আগেই মেনোপোজ হয় তবে বুঝতে হবে তা হরমোনাল কোন সমস্যা কারনে। এক্ষেত্রে বিটের জুস খেলে তা অনেকাংশেই ভালো হয়ে যায়। ভিটে থাকা আয়রন লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে সাহায্য করে, যার ফলে মাসিকের সমস্যা থেকে মুক্তি পাওয়া যায়।

ক্যান্সার নিরাময়ে বিটরুট যেভাবে কাজ করে

বিটের মধ্যে রয়েছে বেটাসায়ানিন, এন্টি টিউমার গুন। এটি ক্যান্সার প্রতিরোধ করে, বিশেষ করে ব্লাডার ক্যান্সার, ইউরিনারি ব্লাডার ক্যান্সার। একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, এই বিট ক্ষতিগ্রস্ত কোষ হতে নতুন কোষগুলোকে বাঁচায়। এতে নতুন কোষ আক্রান্ত হতে পারে না। সেই সাথে বিট নতুন করে কোষ তৈরিতে সাহায্য করে। এভাবে বিট সক্রিয় থেকে ক্যান্সার নিরাময়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে বিটের ব্যবহার

নিয়ম মাফিক খাবার না খাওয়ার ফলে আমরা অনেকেই উচ্চ রক্তচাপ জনিত কারণে ভুগী। কেননা বিভিন্ন তৈলাক্ত খাবার খেলে আমাদের রক্তনালী গুলোর সংকীর্ণ হয়ে যায়। ফলে রক্ত প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এবং উচ্চ রক্তচাপ দেখা দেয়। যদি প্রতিদিন নিয়ম করে ১ থেকে ২ গ্লাস বিটের জুস খাওয়ার যায়। তবে এই উচ্চরক্তচাপ অনেকাংশেই কমে যায় এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে।


কারণ বিটে থাকা নাইট্রেটস রক্তনালীকে প্রসারিত করে উচ্চ রক্তচাপকে নিয়ন্ত্রণ করে। এতে করে আমরা বিভিন্ন রোগ থেকে মুক্তি পাই যেমন: উচ্চ রক্তচাপ, স্ট্রোক, হৃদরোগ, হার্ট অ্যাটাক ইত্যাদি।

রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে বিটের ব্যবহার

বিটে রয়েছে অধিক মাত্রায় এন্টি অক্সিডেন্ট যা আমরা অনেকেই হয়তো জানি না। এন্টিঅক্সিডেন্ট ভেজিটেবিল এর ভিতরে বিট হচ্ছে অন্যতম সবজি। ভিটে রয়েছে অ্যান্টি ইনফ্ল্যামাটরি এজেন্ট বিটালাইন। এই এন্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের মধ্যে রাসায়নিক বিক্রিয়ায় যে বিষাক্ত দ্রব্য তৈরি হয় তা শরীর থেকে বের করে দেয়। এতে করে আমাদের শরীর বিষমুক্ত হয় এবং শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অক্ষুন্ন রাখে। যেমন: প্রদাহ, হৃদরোগ, ক্যান্সারের মতো রোগের ঝুঁকি কমায়।

কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে বিটের ব্যবহার 

যাদের দীর্ঘদিন থেকে কোষ্ঠকাঠিন্য রয়েছে, কোনোভাবেই তা ভালো করতে পারছেন না। তাদের উচিত বেশি করে বিটের জুস খাওয়া। কেননা এই জুসে আছে এসেনশিয়াল এমাইনো এসিড বা Glutamine যা কিনা পরিপাকতন্ত্রের ফিটনেস বাড়াই। বিট বিপাকীয় প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করে হজম ক্ষমতা বাড়িয়ে দেয়। সেই সাথে কোষ্ঠকাঠিন্য সমস্যা দূর করে। এছাড়া বিটে অধিক মাত্রায় ফাইবার থাকার কারণে মলটাকে নরম করে দেয়। যার কারণে কোষ্ঠকাঠিন্য হবার সম্ভাবনা একেবারেই কমে যায়।

রক্তস্বল্পতা ও আয়রনের ঘাটতিতে বিটের ভূমিকা

আমাদের দেশের বেশিরভাগ গ্রাম অঞ্চলের মহিলারা শরীরের রক্তস্বল্পতা জনিত কারণে ভুগে। শুধু তাই নয় বাচ্চা প্রসবকালে অনেক প্রসূতি মা মারা যায়, শরীরে রক্তস্বল্প তার জন্য। বিটের জুস এ প্রচুর পরিমাণ আয়রন থাকে যা লোহিত রক্তকণিকা তৈরিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে থাকে। যে কারণে, যারা রক্তস্বল্পতায় ভুগছেন বা যাদের আয়রনের অভাব রয়েছে তারা অবশ্যই বেশি বেশি করে বিটের জুস খাবেন। নিয়মিত এই বিট জুস খেলে শরীরে রক্তস্বল্পতা এবং আয়রনের ঘাটতি পূরণ হয়ে যাবে।

মাসল ও পেশিশক্তি বাড়াতে বিটের ভূমিকা

অধিকাংশ উঠতি বয়সের ছেলেরা বিশেষ করে ১৬ থেকে ২০ বছরের মধ্যে ছেলেরা, তারা তাদের ফিটনেস ধরে রাখার জন্য নিয়মিত জিমে যান। আপনার মাসুল বা পেশিশক্তি কি বাড়াতে চান? সেই জন্য কি আপনি প্রতিনিয়ত জিমে গিয়ে ব্যায়াম করেন? হ্যাঁ তাদেরকে বলছি, নিয়মিত জিমে যাওয়ার পাশাপাশি বিটের জুস খান, দেখবেন আপনার শরীরে এবং পেশিতে শক্তি অনেক বেড়ে গেছে। এবং হাতের এবং পায়ের মাসল গুলোতে অনেক শক্তি পাচ্ছেন।

ত্বকের মসৃণতা বাড়াতে বিটের ব্যবহার

বিটের জুসে রয়েছে অ্যান্টি এজিং ফর্মুলা। এমন অনেক মানুষ আছে যাদের অল্প বয়সেই বার্ধক্যের ছাপ পড়ে যায়। যার কারণে তারা মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙ্গে পড়ে। যদি নিয়মিত বিটের জুস খাওয়া হয় তবে ত্বকের বিভিন্ন সমস্যা দূর হয়ে যায়। বয়স কালে যদি বার্ধক্য জনিত কারণে চামড়া কুঁচকে যায় বা ছাপ পড়ে সেই ছাপ দূর করবে এই বিটরুট জুস। সেইসাথে ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়াবে।

জন্মগত ত্রুটি দূর করতে বিটের ব্যবহার

আমরা প্রায়ই দেখতে পাই বাচ্চা জন্মের পর বাচ্চার ওজন অনেক অনেক কম থাকে আবার বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে বাঁচা জন্মগ্রহণ করে। বিট জুসের মধ্যে রয়েছে ফলেট ও ফলিক এসিড। এই দুটি এসিডের জন্য জন্মগত বিভিন্ন ধরনের ত্রুটি গুলো দূর হয়ে যায়। আর এজন্য আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় ডাক্তাররা অন্তঃসত্ত্বা মহিলাদের বেশি বেশি বিটের জুস খেতে পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এক্ষেত্রে অন্তঃসত্ত্ব মহিলা এবং তার বাচ্চা দুজনেই ভালো থাকে।

ডিপ্রেশন ও বিষন্নতা কাটাতে জুসের ব্যবহার

আপনি কি ডিপ্রেশনে ভুগছেন? বা বিষন্নতা আপনাকে গ্রাস করছে? এই ধরনের সমস্যা সমাধান করতে পারেন আপনি নিজেই। আপনি জানলে অবাক হবেন যে নিয়মিত বিটের জুস খেলে শরীর ও মন দুটোই ভালো থাকে। বিটে রয়েছে ট্রিপটোফেন ও বিটাইন নামক দুটি উপাদান। যা ডিপ্রেশন ও বিষন্নতা কাটাতে ভালো কাজ করে। এতে করে মন ও মেজাজ দুটোই প্রফুল্ল থাকে।

বিটরুট আপনি কিভাবে খাবেন জেনে নিন:

বিট সাধারণত ৪ ভাবে খাওয়া যায়। 

১। বিটরুট জুস করে খেতে পারেন, 

২। বিটরুট সালাত করে আপনি খেতে পারেন, 

৩। রোস্টেড করে বিটরুট খেতে পারেন, 

৪। স্যুপ করেও আপনি বিটরুট খেতে পারেন।  তবে বিজ্ঞানীরা বলছেন সবচেয়ে সহজ এবং কার্যকরী পদ্ধতি হচ্ছে বিটরুট জুস করে খাওয়া।

শেষ কথা

আমরা বিটরুট সম্পর্কে অনেকেই জানিনা বা এর কোন ধারণাও নেই। আশা করি আপনারা যারা এই পোস্টটি পড়বেন হয়তো তারা বিটরুট সম্পর্কে অনেক কিছু জানতে পারবেন। এক্ষেত্রে আমি আপনাদের পরামর্শ দিচ্ছি আপনার প্রতিদিনের খাদ্যাভাস এর মধ্যে বিশেষ করে সবজি কিনতে গেলে অবশ্যই বিটরুট কিনবেন এবং নিয়ম করে বিটরুটের জুস খান, সবজি খান দেখবেন অন্য যেকোনো মানুষের চাইতে অধিকতর সুস্থ থাকবেন এবং ভালো থাকবেন।







এই পোস্টটি পরিচিতদের সাথে শেয়ার করুন

পূর্বের পোস্ট দেখুন পরবর্তী পোস্ট দেখুন
এই পোস্টে এখনো কেউ মন্তব্য করে নি
মন্তব্য করতে এখানে ক্লিক করুন

অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।

comment url