পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর বিষধর সাপ সম্পর্কে আজকে আপনাদের জানাবো। এই পৃথিবীতে
বিচিত্রময় বিভিন্ন ধরনের জীবজন্তু রয়েছে। এসব জীবজন্তুর মধ্যে আবার কিছু কিছু
জীবজন্তু রয়েছে প্রচন্ড বিষাক্ত। পাশাপাশি সাপ ছাড়াও রয়েছে অনেক বিষাক্ত
পোকামাকড় যেমন বিচ্ছু।
তবে যেহেতু আজকে বিষধর সাপ নিয়ে আলোচনা করব। আপনারা জেনে অবাক হবেন যে পৃথিবীতে
কিছু কিছু সাপ রয়েছে যদি মানুষকে বা অন্য কোন প্রাণীকে দংশন করে তবে অল্প সময়ের
মধ্যেই তারা মৃত্যু বরণ করতে বাধ্য হবে। চলুন জেনে নেয়া যাকপৃথিবীর সবচেয়ে
বিষাক্ত ১০টি সাপ।
ফিয়ার স্নেক নামে পরিচিত হচ্ছে এই বিষাক্ত ইনল্যান্ড তাইপান স্নেক। পৃথিবীর
বিষাক্ত সাপের মধ্যে এর অবস্থান প্রথম। এটি প্রধানত অস্ট্রেলিয়ার কিছু কিছু
অঞ্চলে পাওয়া যায়। এই সাপের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং মারাত্মক। এটি
প্রাথমিকভাবে ছোট ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী এবং ইদুর শিকার করে থাকে। এই সাপের
বিষের ক্ষমতা এতটাই তীব্র যে একটি ছোবলে ১০০ টি পূর্ণবয়স্ক মানুষের মৃত্যু ঘটাতে পারে।
সাধারণত এই সাপটি অনেক
শান্ত স্বভাবের। কখনোই কোনোভাবেমানুষের কাছে আসার চেষ্টা করে না। তবে যদি কোন
কারণে বিপদে পড়ে বা উত্যক্ত হয় তাহলে এর আক্রমণ থেকে কেউ বাঁচতে পারে না।
ইনল্যান্ড তাইপান সাধারণত শুকনো এলাকায় গুহা বা পাথরের চিপা চাপাই বসবাস করে। এই
সাপটির দৈর্ঘ্যে প্রায় ১.৮ মিটার থেকে ২.৫ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়ে থাকে। তবে একটি মজার বিষয়
এই সাপটি পরিবেশের সাথে নিজের রঙের
পরিবর্তন করতে পারে। যেমন শীতকালে এটি গারো বাদামি বা কালচে রংয়ের হয় এবং
গ্রীষ্মকালে হালকা রঙের হয়ে যায়। এই সাপের বৈশিষ্ট্য হচ্ছে বিষের প্রধান উপাদান
হল ট্রক্সিন যা দ্রুত রক্ত জমাটবাধা এবং স্নায়ুতন্ত্রকে প্রভাবিত করতে সক্ষম।
এটি সাধারণত শান্ত প্রকৃতির নিজের এলাকা ছাড়া অন্য কোন এলাকায় ঘোরাঘুরি করে না।
বিষের ক্রিয়া দংশনের পর বিষক্রিয়া দ্রুত শুরু হয় এবং ও রক্ত,
স্নায়ুতন্ত্র সিস্টেমে প্রভাব ফেলে। বিষক্রিয়া শুরু হলে তীব্র ব্যথা, পেশি
শক্ত হয়ে যাওয়া, মাথা ঘুরানো, বমি বমি ভাব, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি লক্ষণ দেখা
দেয়। এর বিষে থাকা হেমোটক্সিন মাংস পেশিকে অকেজো করে ফেলে। রক্তের কোষকে ধ্বংস
করে দেয় এবং অভ্যন্তরীণ ও বাহ্যিক রক্তক্ষরণ ঘটায়। আর এই বিষে থাকা
নিউরোটক্সিনের কারণে নার্ভ সিস্টেম অকেজো হয়ে যায় এবং শ্বাস-প্রশ্বাস এবং
পেশীর কার্যক্ষমতা হারিয়ে ফেল।
চিকিৎসা
দংশনের পর দ্রুত চিকিৎসা না করলে রোগীর মৃত্যুর সম্ভাবনা অনেক বেশি থেকে যায়।
এই ধরনের সাপে কাটা রোগীর প্রধান এবং প্রথম চিকিৎসার হচ্ছে এন্টি ভেনাম ব্যবহার
করা। এছাড়া চিকিৎসার অন্তর্ভুক্ত শ্বাস-প্রশ্বাসের সমর্থন, ব্যাথা নিরোধক এবং
শরীরের অন্যান্য কার্যক্ষমতা রক্ষা করার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
অন্যান্য প্রয়োজনীয় চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। সঠিক চিকিৎসা না পেলে
প্রাণঘাতী হতে পারে।
বেলচেরস সি স্নেক্স এটি রয়েছে বিষাক্ততায় দ্বিতীয়
বেলচেরস সি স্নেক্স এর বৈজ্ঞানিক নাম হচ্ছে হাইড্রোফিস বেলচারী। পৃথিবীর অন্যতম
বিষাক্ত সাপ হিসাবে পরিচিত। এদের সাধারণত ইন্দো প্রশান্ত মহাসাগরীয় উপকূলীয়
অঞ্চলে বসবাস করতে দেখা যায়। এক কথায় এটি একটি সামুদ্রিক সাপ এরা সাধারণত ১
মিটার পর্যন্ত লম্বা হতে পারে। এর শরীর পাতলা এবং আঁশযুক্ত। শরীরের রং হলুদ এবং কালো রংয়ের ব্যান্ড দিয়ে চিহ্নিত করা থাকে।
এরা সাধারণত
ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন, নিউগিনি এবং অস্ট্রেলিয়ার সমুদ্র উপকূলীয় অঞ্চলে
বসবাস করে থাকে। এই সাপ সাধারণত মাছ, ইল বা ছোট সামুদ্রিক প্রাণীকে শিকার করে
বেঁচে থাকে। তারা ডিম পাড়ে কিন্তু ডিম ফুটার আগে ডিম গুলোকে গর্ভে ধারণ করে
এবং সরাসরি এরা বাচ্চা প্রসব করে।
বিষের প্রভাব
সাপটির বিষ প্রোটিন সংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় মারাত্মকভাবে বাধা সৃষ্টি করে। ফলে
স্নায়ুতন্ত্রের কার্যকারিতা নষ্ট হয়ে যায়। এছাড়া এর বিষ রক্তের কোষগুলোকে
ধ্বংস করে ফেলে এবং মাংসপেশীর ক্ষতি সাধন করতে পারে। এই সাপ কিছুটা লাজুক
স্বভাবে এরা হিংস্র প্রকৃতির নয়। এটি মানুষের প্রতি সহজে আক্রমণ করে না
অধিকাংশ ক্ষেত্রে মানুষকে কামড়ালেও বিষ প্রয়োগ করে না। একটা সাপের শরীরে থাকা
বিষ এতটাই তীব্র ও মারাত্মক যে এই বিষ ১০০০ মানুষকেও মেরে ফেলতে পারে।
লক্ষণ কামড়ের স্থানে ব্যথা ,ফুলে যাওয়া এবং লালচে হয়ে যাওয়া ভাব
দেখা যায়। পাশাপাশি শ্বাসকষ্ট, পেশি দুর্বলতা, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস পাওয়া, বমি
বমি ভাব, মাথা ঘোরা ইত্যাদি লক্ষণ দেখা দেয়।
প্রাথমিক চিকিৎসা
কামড়ের স্থানকে শক্ত ভাবে না ভেবে শান্ত রাখা এবং কম নড়াচড়া করতে হবে। যেন
বিষ দ্রুত ছড়াতে না পারে। আক্রান্ত স্থানকে বারবার পানি দিয়ে ধুতে হবে।
কামড়ানোর স্থানটিকে নিচের দিকে করে রাখতে হবে এবং দ্রুত চিকিৎসা কেন্দ্রে
যাওয়ার ব্যবস্থা করতে হবে। বাঁচানোর লক্ষ্যে অক্সিজেন থেরাপি দিতে হবে। পেশি
দুর্বলতা বা পক্ষাঘাত দেখা দিলে হাসপাতালে ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটে চিকিৎসা
করাতে হবে। এবং অন্যান্য লক্ষণ অনুযায়ী উপযুক্ত চিকিৎসা গ্রহণ করতে হবে।
কিং কোবরা তৃতীয় স্থান দখল করে রয়েছে
পৃথিবীর দীর্ঘতম বিষধর সাপের মধ্যে প্রধান হচ্ছে কিং কোবরা। এরা প্রথমত দক্ষিন
পূর্ব এশিয়া এবং দক্ষিণ এশিয়ার জঙ্গলে বাস করে থাকে। এদের দৈহিক আকৃতি
সাধারণত ৩ থেকে ৪ মিটার লম্বা হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে ৫.৫ মিটার পর্যন্ত
হতে দেখা যায়। এদের ওজন প্রায় ৬-১০ কেজি পর্যন্ত হয়ে থাকে। এরা প্রধানত
অন্যান্য সাপ খেয়ে থাকে, এছাড়া টিকটিকি, পাখি, ইঁদুর অন্যান্য ছোট ছোট
স্তন্যপায়ী প্রাণী স্বীকার করে
ধরে খায়। কিং কোবরা সাধারণত একাকী জীবন যাপনকরতে ভালবাসে। তারা গ্রীষ্মকালে
প্রজননের জন্য একত্রিত হয় এবং স্ত্রী সাপটি বাচ্চাদের নিরাপত্তা দিয়ে থাকে।
এরা প্রধানত বৃষ্টিপাত পূর্ণ বিষ্ণুমন্ডলীয় বনাঞ্চলে বসবাস করে এদের
ভারত,বাংলাদেশ, মায়ানমার, থাইল্যান্ড, লাউস, কলম্বিয়া, ভিয়েতনাম,
মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপাইন সহ বিভিন্ন দেশে পাওয়া যায়।
বিষের ধরন
কিং কোবড়ার বিষ একটি কঠিন ও বিষাক্ত মিশ্রণ যা তাদের হার ও মস্তিষ্কের অংশে
অবস্থিত থাকে। এই বিষ মানুষের জন্য মারাত্মক হতে পারে এবং তা নার্ভ সিস্টেমকে
বিষের ব্যবহারে প্রভাবিত করে। বিষটি এতটাই কঠিন যে, মারাত্মক প্রতিক্রিয়া
ঘটাতে পারে এবং এই সাপের কামড়ে মানুষের মৃত্যু ঘটতে পারে যদিনা সঠিক চিকিৎসা
নেওয়া হয়।
চিকিৎসা
যদি সাপের কামড় বা ছিদ্র জন্য রক্ত স্রাব সহ্য করতে হয় তবে সেটি বন্ধ করার
জন্য ব্যবস্থা নিতে হবে। পাশাপাশি সাপের মধ্যে যদি বিষ থেকে থাকে তাহলে
এন্টিভেনাম ব্যবহার করে তাকে নির্মল করতে হবে। আর দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে
অন্যান্য চিকিৎসা দ্রুত নিতে হবে।
টাইগার স্নেক নামের সাপটি রয়েছে চতুর্থ স্থানে
এটি একটি বিশেষ প্রজাতির সাপ যা দক্ষিণ এশিয়া এবং অস্ট্রেলিয়াতে দেখা মেলে।
এই সাপের বিষ খুবই জ্বলন্ত এবং সহজেই মানবদেহে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতি সাধন করতে
পারে।এই বিষের প্রভাব ত্বরান্বিত হয় দ্রুত এবং অতি তাড়াতাড়ি রক্তের গঠনের
সমস্যা সৃষ্টি করে ফলে মানুষ মৃত্যুর মুখে পতিত হয়। এই সাপের পাশের দিক থেকে টাইগারের ডোরাকাটার মত দাগ দেখা যায়। যে কারণে এর
নামকরণ করা হয়েছে টাইগার স্নেক। শরীরের রং সাদা থেকে হলুদ বা ব্যক্তিগত ভাবে
ভিন্নতা আনতে পারে। এরা লম্বা দেখতে প্রায়চার ফুট দৈর্ঘ্যের হতে পারে।
বিষের প্রভাব
টাইগার স্নেক দংশনের ফলে মানুষের বিভিন্ন ক্ষতিকর দিক দেখা যেতে পারে। এই বিষের
প্রধান প্রভাব হল শরীরের ব্লাড সার্কুলেশন এবং মানবের স্নায়ুতন্ত্র কে নষ্ট
করে দেয়। যদিও টাইগার স্নেকের বিশেষ প্রভাব বিভিন্ন ব্যক্তিতে ভিন্নভাবে
প্রকাশ পায়। যেমন-
শারীরিক অসুস্থতা টাইগার স্নেকের বিশ্বের মূল কারণ হলো নির্দিষ্ট
স্কোপলামিন এর কারণে মানুষ অত্যন্ত শারীরিকভাবে অসুস্থ হয়ে পড়ে এবং রক্তচাপ ও
হৃদ রোগের সমস্যা সৃষ্টি করে।
নিউরোলজিক্যাল অসুস্থতা এই বিষের কারনে স্বাভাবিক ভাবে বিভিন্ন সমস্যার
সৃষ্টি হয় এবং মস্তিষ্কের রক্তক্ষরণের মাধ্যমে মানুষকে মৃত্যুর দিকে ধাবিত
করে।
ব্ল্যাক মাম্বার বিষধর সাপটি রয়েছে পঞ্চম স্থানে
ব্ল্যাক মাম্বা হল একটি বিশেষ প্রজাতির সাপ যা মোসাম্বিক হাইড্রোপিলিটন নামে
পরিচিত। এটি আফ্রিকার মধ্যপ্রাচ্যে পাওয়া যায় এবং বিশেষ করে আফ্রিকার প্রায়
শীতল স্থানে এদেরকে বেশি পাওয়া যায়। এই সাপ লম্বা দাঁত যুক্ত এবং লম্বায়
দীর্ঘতম। এর দাঁতের মাধ্যমে একটি বিশেষ ধরনের জোহর প্রসারিত করতে পারে যা মানুষের জন্য মৃত্যুর কারণ হতে পারে। এছাড়া এই সাপ
বিশ্বের দ্রুতগামী সাপদের মধ্যে একটি। এরা লম্বায় প্রায় ৬ থেকে ৭ ফুট পর্যন্ত
হতে পারে এবং শরীর মাঝারি হালকা মঙ্গল রং বিশিষ্ট এবং এর মুখের ভেতরে অনেক কালো
অন্ধকার যুক্ত । এই সাপের বৈশিষ্ট্যগুলো হল-
দীর্ঘ হাইড্রোফোবিক ব্ল্যাক মাম্বার সাপের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো এটি জলের
অধিকাংশ অংশে থাকে এবং দীর্ঘ সময় ধরে জলের মধ্যে ডুব দিয়ে থাকতে পারে।
একাধিক ভয়ানক বিষ এই সাপের বিষের মধ্যে নির্দিষ্ট পরিমাণে
নিউরোট্রক্সিন রয়েছে যা মানুষের মধ্যে মৃত্যুর পরিবর্তে পর্যাপ্ত মাত্রায়
বিষণ্ণতা এবং অস্থিতির কারণ হতে পারে। এই সাপের বিষে রয়েছে বিশেষত কার্বনিক
হাইড্রোক্সাইড যা মানুষের দেহে ভেসে যাওয়া সাধারণ হাইড্রোক্সাইড এর তুলনায়
অনেক কঠিন।এই সাপের বিষের তীব্রতা মারাত্মক বিপদজনক।যদি সঠিক সময়ে
চিকিৎসা নেওয়া না হয় তাহলে তা মৃত্যুর কারণ হতে পারে। যদি কেউ ব্ল্যাক
মাম্বার কাছে আঘাত পেয়ে বিষের প্রভাবে আক্রান্ত হন। তবে আঘাত পাওয়ার পরে যত
তাড়াতাড়ি সম্ভব চিকিৎসা শুরু করে দেয়া উচিত। ব্লাক মাম্বার সাপের বিষের
প্রতিক্রিয়া এত দ্রুত হতে পারে যা মৃত্যুর কারণ হতে পারে চিকিৎসার প্রারম্ভে
প্রাথমিক পরীক্ষা, হৃদপিণ্ড পরীক্ষা যত দ্রুত সম্ভব করানোর ব্যবস্থা করা।
অস্ট্রেলিয়ান ব্রাউন স্নেক রয়েছে ষষ্ঠ স্থানে
এই সাপের বৈজ্ঞানিক নাম হল কেলেডোনিয়া ট্রাইগিনাস। এটি একটি বৃহত্তম
অস্ট্রেলিয়ান স্নেক যা প্রায় ২ মিটার লম্বা হতে পারে এবং প্রায় ৯ কেজি ও তার
বেশি ওজন হতে পারে। এই সাপের রঙ ব্রাউন কালার তাই এর নামকরণ করা হয়েছে
অস্ট্রেলিয়ান ব্রাউন স্নেক। এই সাপ সাধারণত মানুষকে আক্রমণ করতে পছন্দ করে না।
এছাড়া এই সাপের খাবার হিসেবে অন্যান্য সাপ এবং ছোট পাখি, ছোট ছোট স্তন্যপায়ী
প্রাণী পছন্দ করে থাকে।
বিষের বিষক্রিয়া
এই সাপ অত্যন্ত বিষাক্ত। একজন মানুষ যদি এই সাপের ছোবল খায় তাহলে সঠিক চিকিৎসা
না দেওয়া হলে জীবন বাঁচানো সম্ভব নয়। ব্রাউন স্নেকের দংশনের ফলে শ্বাসকষ্ট ও
ওজন হারানো, মাথা ব্যাথা, ক্ষুদামন্দা বৃদ্ধি, হৃদপিন্ডের মধ্যে ব্যথা, চোখের
দৃষ্টি হারানো এবং অস্থিমন্ডলীতে সমস্যা দেখা দেয়। যদি এই সাপের দংশনে কোন
মানুষ অসুস্থ হয় তবে তাকে দ্রুত চিকিৎসা করার জন্য হসপিটালে নিতে হবে এবং
এন্টি ভেনাম এর মাধ্যমে বিষটাকে নিষ্ক্রিয় করে দিতে হবে।
বুম স্ল্যাং নামক সাপটি রয়েছে সপ্তম স্থানে
এটি একটি বিষধারি সাপ যা মূলত আফ্রিকার উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে অবস্থান করে। এছাড়া
এটি বাংলাদেশের চট্টগ্রাম ও খুলনা জেলার পাহাড়ি অঞ্চলে পাওয়া যায়। এরা
সাধারণত গাছের উপরে বসবাস করে এবং পাতার মধ্যে লুকিয়ে থাকে। যার ফলে এদেরকে
সহজে দেখতে পাওয়া যায় না। এটি বিশেষভাবে মাত্র ১ মিটার পর্যন্ত এবং গড়ে ১.৬
মিটার লম্বা হতে পারে।
এই সাপের বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো প্রকৃতির রংয়ের সাথে নিজেররং এর পরিবর্তন করতে
পারে। এই জাতীয় সাপের বিষ অত্যন্ত সক্রিয়। বিষে হেমোট্রক্সিন রয়েছে যা মানব
দেহের রক্তকে জমাট বাঁধতে বিশেষভাবে ব্যাহত করে। এতে করে রক্তপাত সৃষ্টি হয়
এবং পরিস্থিতির উন্নতি না হলে মৃত্যু ঘটাতে পারে। এই সাপের বিষের প্রভাব মানব
জীবনের জন্য অত্যন্ত ভয়ানক হতে পারে এবং সঠিক চিকিৎসার অভাবে মৃত্যু ঘটতে
পারে।
চিকিৎসা
এই সাপের চিকিৎসা সম্পর্কে যদি কোন সমস্যা থেকে থাকে। তাহলে দ্রুত একটি
হাসপাতালে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে এবং বিষের ক্রিয়া মুক্ত করতে
এন্টিভেনাম ব্যবহার করতে হবে। এছাড়া অন্যান্য ক্ষতির লক্ষণ অনুযায়ী দ্রুত
চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।
কোরাল স্নেক বিষাক্ততায় রয়েছে অষ্টম স্থানে
কোরাল স্নেক বিষাক্ত সাপের একটি প্রজাতি যা এলাপিডি পরিবারের অন্তর্ভুক্ত। এর
শরীরে উজ্জ্বল রংয়ের দাগ থাকে যা লাল কালো এবং হলুদ বা সাদা বর্ণের হতে পারে।
এদের দেহের দাগের এই বিন্যাস প্রজাতি অনুসারে ভিন্ন রকম হতে পারে। সাধারণত লাল
দাগের পাশে কালো দাগ থাকে এবং হলুদ বা সাদা দাগ গুলো লাল ও কালো দাগের মাঝে
অবস্থান করে। কোরাল স্নেক দুটি প্রধান ভাগে বিভক্ত। যেমন-
১। নতুন বিশ্বের কোরাল স্নেক ও ২। পুরাতন বিশ্বের কোরাল স্নেক। নতুন বিশ্বের
কোরাল স্নেক উত্তর ও দক্ষিণ আমেরিকাতে পাওয়া যায়। এবং পুরাতন বিশ্বের কোরাল
স্নেক এশিয়া ও আফ্রিকায় পাওয়া যায়। কোরাল স্নেক সাধারণত বন, বালুকাময়
এলাকা এবং আদ্র স্থানগুলোতে বসবাস করতে পছন্দ করে। এরা বেশিরভাগ সময় মাটির
নিচে বা গাছের তলায় লুকিয়ে থাকতে পছন্দ করে।
কোরাল স্নেক ছোট সাপ, টিকটিকি এবং অন্যান্য ছোট সরীসৃপ ও উভচরদের খাদ্যহিসাবে
গ্রহণ করে থাকে। তারা সাধারণত রাতের বেলায় স্বীকার করতে বের হয়। কোরাল
স্নেকের বিষ নিউরোট্রক্সিক যা স্নায়ুর প্রবাহে বাধা সৃষ্টি করে এবং সেন্ট্রাল
নার্ভাস সিস্টেমকে অকেজো করে ফেলে। তাদের কামড়ে সাধারণত তাৎক্ষণিকভাবে ব্যথার
সৃষ্টি করে না। তবে বিষ প্রবেশের কয়েক ঘন্টা মধ্যেই
বিষক্রিয়া শুরু হতে পারে। বিষক্রিয়ার
ফলে শ্বাসকষ্ট, প্যারালাইসিস এবং অঙ্গহানি হতে পারে। এমনকিমৃত্যু ঘটতে পারে।
কোরাল স্নেকের কামড় থেকে রক্ষা পাওয়ার জন্য সতর্কতা অবলম্বন করতে হবে। যদি
কেউ কোরাল স্নেকের কামড় খেয়ে থাকেন তবে দ্রুত চিকিৎসা গ্রহণ করা উচিত। বিষের
প্রভাব কমানোর জন্য অবশ্যই এন্টিভেনাম ব্যবহার করতে হবে।
ভাইপার নামের বিষাক্ত সাপ রয়েছে নবম স্থানে
ভাইপার সাপগুলো বিশ্বের বিভিন্ন অঞ্চলে পাওয়া যায়। তবে ভারতবর্ষে এর আধিপত্য
অনেকাংশই বেশি। এছাড়া এটি প্রধানত দক্ষিন এশিয়ার দেশ বাংলাদেশ, ভারত,
শ্রীলংকা, পাকিস্তান, থাইল্যান্ড, ফিলিপাইন, ইন্দোনেশিয়া, আফগানিস্তান ইত্যাদি
দেশগুলোতে দেখতে পাওয়া যায়। এবং এরা সাধারণত বিষাক্ত সাপ হিসেবে পরিচিত। ভাইপার সাপের দেহ সাধারণত পুরু এবং ছোট। এদের মাথা ত্রিকণাকার এবং দেহের
বাকি অংশ থেকে স্পষ্টভাবেই আলাদা।ভাইপার সাপের দুইটি বড় বিষ দাত থাকে।
যা
ভাঁজ করে রাখতে পারে এবং প্রয়োজনে শিকারকে কে মেরে ফেলে। ভাইপার সাপের চোখের
মনি উলম্ব এবং তাদের দৃষ্টিশক্তি অনেক তীক্ষ্ণ। ভাইপার সাপ গ্রীষ্ণমন্ডলী ও নাতিশীতোষ্ণ অঞ্চলে বেশি দেখা যায়।
এরা সাধারণত জঙ্গলে, পাহাড়ি এলাকা এবং গাছের উপরে বাস করে। এই সাপ গুলো
প্রধানত ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি, ছোট সরীসৃপ এবং উভচর প্রাণী স্বীকার করে
ক্ষুধা নিবারণ করে। এরা শিকার ধরার সময় তাদের বিষাক্ত ছোবল করে মেরে ফেলে।
বিষক্রিয়
ভাইপার সাপের বিষ হেমোটক্সিক যা রক্তের কোষ ধ্বংস করে এবং রক্ত জমাট বাধার
প্রক্রিয়া এটি বাহত করে। বিষের কারণে স্থানীয় টিস্যু ক্ষতিগ্রস্ত হয় এবং এটি
পুরো শরীরের ছড়িয়ে পড়লে মৃত্যু অবধারিত।
প্রতিকার
ভাইপার সাপের কামড়ের প্রতিকার হিসাবে অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা হয়। কামরের
স্থানে চাপ না দিয়ে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়া দরকার। ভাইপার সাপের প্রকারভেদ।
বিভিন্ন ধরনের ভাইপার সাপ থাকলেও প্রধানত ভাইপার সাপ ৩ ধরনের হয়ে থাকে
যেমন-
১। কোবরা ভাইপার
২। রাসেল ভাইপার
৩। সাউথান ভাইপার
১। কোবরা ভাইপার
এটি একটি বিশাল সাপ যা ভারত, শ্রীলংকা, বাংলাদেশ, পাকিস্তান ইত্যাদি দেশে
পাওয়া যায়, এর দংশনে মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে। এছাড়া কোবরা ভাইপার
অনেকটাই লম্বা হতে পারে এবং এর শরীর প্রধানত পৃষ্ঠ ভর্তি থাকে। এর চোখ
বিশেষভাবে বড় হতে পারে। তার মাথা প্রস্থহীন লম্বা ও মাঝারি। এরা অন্য সাপের মত
বেশি বাহিরে যায় না।ভাইপার সাপের গাইড শেড বিশেষভাবে ধাবিত হতে পারে।
যা সাপটির মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকে। এছাড়া এই সাপের
শরীর সাদা হওয়ায় অন্যান্য প্রজাতি থেকে আলাদা। তবে কিছুটা কালচে বর্ণের ও হয়ে
থাকে।বুকের দিকটায় দুটো সুরঙ্গ থাকে যা সাপের একটি চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। এর
পাঞ্জা সাধারণত পক্ষীর মত কিছুটা প্রশস্ত ও বৃহত্তর এবং সংযুক্ত।কোবরা ভাইপার
প্রায় পাহাড়ি অঞ্চলের এলাকায় দেখা যায়। মানুষ থেকে
কিছুটা দূরে থাকে তারা সাধারণত পুকুর, নদী ও চলমান পানিতে
বসবাস করে। এ ধরনের সাপ মেস, হরিণ, খরগোশ ইত্যাদি সহ বিভিন্ন প্রাণীর মাংস
খেয়ে থাকে। তারা নিজেরা একটি স্থায়ী বাসায় থাকার জন্য একটি সুরক্ষিত স্থান
তৈরি করে। এছাড়া অনেকটা তারা গাছের গেটের ফাঁকে থাকতে ভালোবাসে। যেখানে
পর্যাপ্ত পরিমাণ পানি পাওয়া যায় ঠিক সে সব জায়গায় তারা বসবাস করে।
২। রাসেল ভাইপার
রাসেল ভাইপার কে মাওনা ভাইপার ও বলা হয়। রাসেল ভাইপার আবার চন্দ্রবোড়া নামে ও
পরিচিত। রাসেল ভাইবার এর বৈজ্ঞানিক নাম Daboia russelii এরা খুব বড় আকারের হতে
পারে। যার দৈর্ঘ্য কমপক্ষে ১২ থেকে ১৮ ফুট পর্যন্ত হতে পারে। এদের দেহের রং
সাধারণত হলুদ বা বাদামী হয় এবং দের উপরিভাগ সাদা বা হালকা রঙের গোলাকার চিহ্ন দেখা যায়। মাথা ত্রিকনাকার এবং
দেহের বাকি অংশ থেকে টোটালি আলাদা। মনে হয় এই
সাপ খুব ভয়াবহ এবং মারাত্মক। সাধারণত মানুষকে হামলা করতে পারে না। তবে সম্ভবত
অল্প মজা নিতে পারে। এই সাপের মাউল খুব বিশাল এবং ভারী হতে দেখা যায়। এই সাপের
বাচ্চারা পুষ্টির জন্য অধিকাংশই লোকালয় এগিয়ে যায় এবং মানুষেরপ্রেক্ষাপটে যোগাযোগ করতে চাই। রাসেল ভাইপার
সাধারণত দক্ষিণ এশিয়া, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া
এবং চীনের বিভিন্ন অঞ্চলে বসবাস করতে দেখা যায়। এরা ঘন ঘাস, খোলা মাঠ, জঙ্গল
এবং খামার এলাকায় বেশি আনাগোনা করে। এরা প্রথমত ইদুর, পাখি, ব্যাংক এবং ছোট
সরীসৃপ স্বীকার করে খাদ্য হিসেবে খায়। শিখার ধরার সময় এরা ফোসফোস শব্দ করে
এবং তাদের বিষাক্ত দাঁত দিয়ে শিকারকে বিষ দিয়ে মেরে ফেলে।
বিষক্রিয়া
রাসেল ভাইপারের বিষ অত্যন্ত শক্তিশালী এবং হেমাটক্সিক প্রকৃতির। এই বিষের কারণে
রক্তচাপ কমে যায় রক্ত জমাট বাঁধার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং স্থানীয় টিস্যু
ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ভাইপার সাপে নিউরোটক্সিন রয়েছে। এই নিউরোটক্সিন নার্ভ
সিস্টেমের কাজে বাধা প্রদান করে। এছাড়া প্রোটিনেস রয়েছে যা অনেকগুলো
প্রোটিনেস পাওয়া যায়।এছাড়া এ সাপের কামড়ের মধ্যে
অনেকগুলো গলবলিন রয়েছে। গলবলিন থাকার কারনে কামড়ানোর পর দ্রুত চিকিৎসা না
নিলে মৃত্যু অবধারিত। সাপটি কামড়ের পর স্থানীয় ব্যথা, ফুলে যাওয়া এবং
দর্শনের ফলে রক্তে জমাট বাধার ক্ষমতা হ্রাস পায়।এছাড়া রক্তপাত হতে পারে কিডনি
এবং অন্যান্য অভ্যন্তরীণ অঙ্গের রক্তপাত ঘটে, শ্বাস নিতে সমস্যা হতে পারে,
ফুসফুসের তরল জমা হতে পারে। বিষক্রিয়ার ফলে রক্তচাপ কমে যাওয়া, মাথা ঘোরা,
বমি এবং তন্দ্রা দেখা দিতে পারে।
চিকিৎসা পদ্ধতি
ক্ষতস্থানে ঠান্ডা পানি দিয়ে বারবার ধুয়ে দিতে হবে। ক্ষতস্থানকে নিচু করে
রাখতে হবে যেন বিষ উপরে উঠতে না পারে। কামড়ানো স্থানটি নড়াচড়া করা যাবে না।
আর সেই সাথে দ্রুত হাসপাতালে জরুরি বিভাগে পাঠিয়ে দিতে হবে। ভাইপার সাপের বিষ
নিরোধক প্রয়োগ করতে হবে। পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। কিডনি এবং
অন্যান্য অঙ্গের কার্যকারিতা পর্যবেক্ষণ করে দেখতে হবে। প্রয়োজন অনুযায়ী ওষুধ
প্রয়োগ করতে হবে।
প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা
এই সাপ যেসব এলাকায় থাকে সেসব জায়গায় সাবধানতা অবলম্বন করে চলাফেরা করতে
হবে। উন্মুক্ত স্থানে কাজ করার সময় লম্বা জুতা ও মোজা পরিধান করতে হবে। সাপ
দেখলেদ্রুত নিরাপদ স্থানে সরে যেতে হবে।
৩। সাউথান ভাইপার
সাউথান ভাইপার সাপটি বিষধর সাপের মধ্যে একটি বিশেষ প্রজাতি। এর বৈজ্ঞানিক নাম
হল ভাইপ্যারা অসপিস। এই সাপটি মূলত ইউরোপের দক্ষিণ ও পশ্চিম অঞ্চলে দেখতে
পাওয়া যায়। সাউথান ভাইপার সাপের বিভিন্ন মুখী বৈশিষ্ট্য রয়েছে যেমন- দেহের আকার সাধারণত এই সাপের দৈর্ঘ্য ৬০ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত হতে দেখা
যায়। কিছু কিছু ক্ষেত্রে আবার ১০০ সেন্টিমিটার পর্যন্ত দীর্ঘ হতে পারে। এই
ভাইপারের গায়ের রং সাধারণত ধূসর বাদামী বা হলুদাভ হয়ে থাকে।
এদের শরীরে গারো
দাগ বা প্যাটার্ন থাকে যা তাদের পরিবেশের সাথে মিশে যেতে সাহায্য করে। এই সাপ
গুলো সাধারণত পাহাড়ি অঞ্চল, বন এবং পাথরে এলাকায় বসবাস করতে পছন্দ করে।এদের দেখা মেলে প্রজননমৌসুম সাধারণত
বসন্তকালই হয়ে থাকে। স্ত্রী সাপ প্রতিবছর ২ থেকে ১২টি ডিম পারে যা গ্রীষ্মকালে
ফোটে ছোট সাপের জন্ম হয়। এরা ছোট ছোট স্তন্যপায় প্রাণী, পাখি, ছোট সরীস এবং
বড় পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকে। এরা বিষ প্রয়োগে শিকার কে পঙ্গু করে তারপরে
এরা গিলে ফেলে।
বিষের ধরন
ভাইপার সাপের বিষ মানুষের জন্য অত্যন্ত বিপদজনক হয়ে থাকে। বিষের কারণে তীব্র
ব্যথা, ফোলা রক্তচাপ কমে যাওয়া এবং কিছু ক্ষেত্রে মানুষের মৃত্যু হতে পারে। এই
সাপের কামড়ের বিষের থেকে বাঁচার উপায় তৎক্ষণাৎ চিকিৎসা নেওয়া এবং এই বিষের
বিপরীতে এন্টিভেনাম ব্যবহার করা। এছাড়া বিভিন্ন অসুস্থতার জন্য উপযুক্ত
চিকিৎসাগ্রহণ করা।
সতর্কতা
এই সাপগুলো সাধারণত আক্রমণাত্মক নয় এবং সহজে মানুষের উপর আক্রমণ করে না। যদিও
না তারা বিপদ অনুভব করে থাকে। তবে জঙ্গলে বা পাহাড়ে এলাকায় হাঁটার সময় সতর্ক
থাকা উচিত এবং সাপের কোন চিহ্ন দেখলে দ্রুত নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা উচিত।
ডেথ এড্ডার বিষাক্ত সাপ রয়েছে দশম স্থানে
ডেট এডডার একটি বিষধর সাপ যা অস্ট্রেলিয়া ও পাপুয়া নিউগনিতে অধিক পরিমাণে
পাওয়া যায়। এর বিষ খুবই শক্তিশালী এবং এটি অল্প সময়ের মধ্যেই শিকারকে কাবু
করে মেরে ফেলতে পারে। এই সাপের কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন- এটি অস্ট্রেলিয়া
এবং পাপুয়া বনাঞ্চল এবং শুষ্ক অঞ্চলেও বাস করতে দেখা যায়।এদের শরীর চ্যাপ্টা
এবং চওড়া।
সাপের মাথা ত্রিভুজ আকৃতির এবং শরীরের তুলনায় প্রশস্ত। দেহ লাল বাদামী এবং কালো রঙের
বিভিন্ন দাগ থাকে। তাদের পরিবেশের সাথে মিশে যাওয়া প্রবণতা রয়েছে ফলে শিকার
দ্রুত প্যারালাইসিস হয়ে যায়।এরা মূলত ছোট স্তন্যপায়ী প্রাণী, পাখি এবং
অন্যান্য সাপ খায়। এরা শিকার ধরার জন্য লুকিয়ে থেকে আক্রমণ করে। এদের দৃষ্টি
খুব প্রখর, এরা রাতের বেলায় শিকার করার
জন্য ইনফ্রে রেড দৃষ্টি ব্যবহার করে।এরা একাকী সাপ শুধুমাত্র প্রজনন মৌসুমে সঙ্গীর
সন্ধানে বের হয়। ডেথ এডডার সাপ ডিম পারে না বরং বাচ্চা সরাসরি জন্ম দেয় যা
অল্প বিশেষদের মধ্যে বিরল। সাধারণত ১০ থেকে ১৫ বছর পর্যন্ত বেঁচে থাকতে পারে।
এই সাপ সাধারণত আক্রমণ করার আগে সতর্ক সংকেত দেয় না ফলে এদের সাথে মোকাবেলা
খুবই বিপদজনক হতে পারে।
বিষক্রিয়া
-
এদের বিষাক্ত ছোবলে দ্রুত রক্তচাপ কমিয়ে দেয় যার ফলে শারীরিক দুর্বলতা এবং
ঘুম হতে পারে।
- বিশেষ স্নায়ুতন্ত্রে আক্রমণ করে যা শারীরিক নিয়ন্ত্রণ হারানো, বেশি
দুর্বলতার বিশেষ কারণ হতে পারে।
- বিষক্রিয়া শ্বাস-প্রশ্বাসের পেশি গুলোকে অকেজো করে দেয় যার ফলে শ্বাসকষ্ট
হতে পারে।
- বিষের কারনে রক্তের গঠনকে প্রভাবিত করে যা রক্তপাতের ঝুঁকি বাড়িয়ে
দেয়।
- এর বিষ হৃদ যন্ত্রের কার্যক্ষমতা লোপ পাইয়ে দেয় এবং হৃদ যন্ত্রের বন্ধ
হওয়ার ঝুঁকির সৃষ্টি করে।
- বিষের কারণে তীব্র বমি বমি ভাব হতে পারে যা শারীরিক দুর্বলতা বাড়িয়ে
দেয় বিষ প্রয়োগের পর মাংসপেশিগুলোতে তীব্র ব্যথা দেখা যায়।
- বিষ চোখের পেশিগুলোকে প্রতিহত করতে পারে। যার ফলে দৃষ্টিশক্তি কমে যায় এবং চোখ
ঝাপসা দেখায়।
- তীব্র বিষক্রিয়ার ফলে রোগী অজ্ঞান হয়ে যেতে পারে। চিকিৎসা না
নিলেমৃত্যু ঘটতে পারে।
বাংলাদেশের বিষধর সাপের তালিকা
বাংলাদেশে পাওয়া যায় এমন অনেক বিষধর সাপ রয়েছে তবে উল্লেখযোগ্য দশটি বিষধর সাপের তালিকা দেয়া হলো-
- কিং কোবরা (King Cobra)
- কালাচ (Common Krait)
- বাঁশপাতি সাপ (Banded krait)
- গোখরা (Indian Cobra)
- চন্দ্রবোড়া (Russells Viper)
- ফুলসাপ (Monocled Cobra)
- চোখাচাদঁ (Saw-scaled Viper)
- দুর্গা প্রতিমা (Hump-nosed Pit Viper)
- লালাচিতী সাপ (Red-necked Keelback)
- বড়ডোরি (Kings Pit Viper)
শেষ কথা
উপরের পোস্ট পড়ে আপনারা বুঝতেই পারছেন পৃথিবীতে বিচিত্র রকমের জীবজন্তু
রয়েছে। যেগুলো মানুষের জীবনের অতপ্রতো ভাবে জড়িত। তবে কিছু কিছু ক্ষেত্রে
কিছু প্রাণী রয়েছে যা মানুষের মারাত্মক ক্ষতিসাধন করে থাকে। তার মধ্যে
উল্লেখযোগ্য হচ্ছে বিষধর সাপ। বিষধর সাপ যে শুধু মানুষের ক্ষতিই করে এমনটা
কিন্তু নয়। এই বিষধর সাপের বিষ থেকেই তৈরি হয় ক্যান্সার প্রতিরোধক ঔষধ। তবে
হ্যাঁ অবশ্যই মানুষকে বিভিন্ন কর্ম ক্ষেত্রে বা চলাফেরাই সাবধানতা অবলম্বন করতে
হবে। কেননা সাবধানতা হচ্ছে দুর্ঘটনা থেকে মুক্তির উপায়।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url