গর্ভবতী মহিলার বিকালঙ্গ বাচ্চা হওয়ার কারন জেনে নিন
গর্ভবতী মহিলার বিকালঙ্গ বাচ্চা হওয়ার কারন জেনে আপনি আশ্চর্য হয়ে যাবেন। আসলে কেউই চায় না তাদের বাচ্চা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মগ্রহণ করুক। সবারই প্রত্যাশা একটি সুন্দর ফুটফুটে বাচ্চা পৃথিবীতে আসুক বাবা মায়ের কোল জুরে। তবে
এক্ষেত্রে সৃষ্টিকর্তার ইশারায় সবকিছু হয়ে থাকে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে জীবনযাত্রার কারণে, নিজেদের ভুলত্রুটির কারণেও অনাগত বাচ্চা বিকলাঙ্গ হয়ে জন্মগ্রহণ করে থাকে। আসুন আজ এই পোস্টে কি কারণে বাচ্চা বিকলাঙ্গ হয় সেই বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করব।
পেজ সূচিপত্র: গর্ভবতী মহিলার বিকালঙ্গ বাচ্চা হওয়ার কারন জেনে নিন
- বংশগত বা জেনেটিক সমস্যার কারণে বাচ্চার বিকলাঙ্গতা
- পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে বাচ্চার বিকলাঙ্গতা
- মায়ের স্বাস্থ্য ও জীবনধারার কারণে বাচ্চার বিকলাঙ্গতা
- বাঁচার জন্মগতভাবে ত্রুটি হওয়ার অজানা কারণ
- শেষ কথা
বংশগত বা জেনেটিক সমস্যার কারণে বাচ্চার বিকলাঙ্গতা
বংশগত বা জেনেটিক সমস্যার কারণে বাচ্চার বিকলাঙ্গতা হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
এক্ষেত্রে আমরা জানি যে প্রত্যেকটা মানুষের বিশেষ করে মহিলাদের এবং পুরুষদের
ক্ষেত্রে একজোড়া আলাদা আলাদা ক্রোমোজোম রয়েছে। এই ক্রোমোজোমের
অস্বাভাবিকতার কারণে অনেক সময় শুক্রাণু এবং ডিম্বাণু গঠনের ফলে কোষ বিভাজনে
বিভিন্ন ত্রুটির কারণে বিভিন্ন ধরনের বিকলাঙ্গ তার সৃষ্টি হতে পারে।
এছাড়া নির্দিষ্ট জিনের মিটেশনের কারণে ও বাচ্চা জন্মগতভাবে বিকৃত হতে পারে। এই জিনের মিউটেশন বিভিন্ন প্রকারের হয়ে থাকে যেমন বাবা-মার উত্তরাধিকার সূত্রে পাওয়া, এছাড়া অর্জিত ব্যক্তির উত্তরাধিকার সূত্রে মিউটেশন গুলি হয়ে থাকে। যেমন একজন পিতামাতার একটি জিনের একক অনুলিপিতে যদি একটি মিউটেশন থাকে তাহলে এটি তাদের সন্তানদের মধ্যে যাওয়ার ৫০% সম্ভাবনা থেকে থাকে এতে বাচ্চা অস্বাভাবিক হতে পারে।
পারিপার্শ্বিক অবস্থার কারণে বাচ্চার বিকলাঙ্গতা
পারিপার্শ্বিক বা পরিবেশগত অবস্থার কারণে ও বাচ্চা বিকলাঙ্গ হতে পারে। এ ক্ষেত্রে
গর্ভাবস্থায় নির্দিষ্ট কিছু পদার্থের সংস্পর্শে যদি আসা যায় সে ক্ষেত্রে
বাচ্চার জন্মগত ছুটি হতে পারে যেমন-
গর্ভাবস্থায় যদি কোন মহিলা ড্রাগস এবং অ্যালকোহল সেবন করে সেক্ষেত্রে ভ্রূণের অ্যালকোহলীয় স্প্রেকট্রাম রোগ হতে পারে। যা বৃদ্ধির ঘাটতি, মুখের অসঙ্গতি এবং কেন্দ্রীয় স্নায়ুতন্ত্রের কর্মহীনতার সমস্যা দেখা দিতে পারে। গর্ভাবস্থায় কিছু প্রেসক্রিপশন এবং অভার দা কাউন্টার অর্থাৎ ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়াই ওষুধ সেবন করলে ক্ষতি হতে পারে। গর্ভাবস্থায় কিছু সংক্রামক রোগ রয়েছে যেমন- রুবেলা সাইটোমেগালো ভাইরাস এবং
জিকা ভাইরাস, জন্মগত ত্রুটির কারণ হতে পারে। রুবেলা দ্বারা আক্রান্ত মায়ের
বাচ্চা জন্মগত ভাবে রুবেল সিনড্রোম হতে পারে। আক্রান্ত বাচ্চা হার্টের
সমস্যা, শারীরিক বিকাশে বিলম্ব এবং শ্রবণ শক্তিহীনতা রোগ আক্রান্ত হতে পারে। আবার
কিছু কিছু ক্ষেত্রে রাসায়নিক এবং উচ্চমাত্রার বিকরণের ফলেও জন্ম ত্রুটি নিয়ে
বাচ্চা জন্মগ্রহণ করতে পারে। যেমন- বিষাক্ত কীটনাশক, ভারী ধাতু জন্মগত ত্রুটির
ঝুঁকি বাড়িয়ে দিতে পারে।
মায়ের স্বাস্থ্য ও জীবনধারার কারণে বাচ্চার বিকলাঙ্গতা
মায়ের স্বাস্থ্য এবং জীবনধারার কারণেও বাঁচার অস্বাভাবিকতা দেখা দিতে পারে। যেমন- কিছু রোগ রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্যের অবস্থার অবনতি করে দেয়। যেমন ডায়াবেটিস এবং স্থুলতার মত অবস্থা জন্মগত ভাবে বিকৃত বাচ্চা জন্ম হতে পারে। অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস নিউরাল টিউব ত্রুটি এবং হার্টের ত্রুটি ঘটায়ে থাকে সেক্ষেত্রে বাচ্চা বিকলাঙ্গ হতে পারে। এছাড়া প্রয়োজনীয় পুষ্টির ঘাটতিতে জন্মগত ত্রুটি হতে পারে।
আরো পড়ুন: স্ট্রোক পরবর্তী প্যারালাইসিস রোগীর চিকিৎসা সঠিক নিয়ম
উদাহরণস্বরূপ বলা যায় যে, ফলিক এসিডের ঘাটতিতে নিউরাল টিউব ত্রুটি হয়ে থাকে। যার কারণে ত্রুটিযুক্ত বাচ্চার জন্মগ্রহণ করে থাকে। আরেকটি বিষয় জেনে রাখা ভালো বাবা-মায়ের বয়সের উপর বাচ্চার সুস্থতা এবং অসুস্থতা নির্ভর করে। যেমন মায়ের বয়স ৩৫ এর উপর বাবার বয়স ৫০ বছর হয়। আর যদি মা গর্ভধারণ করে বাচ্চার ডাউন সিনড্রোমের মত ক্রোমোজোমাল অস্বাভাবিকতার জন্য একটি ঝুঁকি থেকে যায়। এই ধরনের বিভাজনের কারণেও বাচ্চা ত্রুটি নিয়ে জন্মগ্রহণ করে।
বাঁচার জন্মগতভাবে ত্রুটি হওয়ার অজানা কারণ
অনেক ক্ষেত্রে বাচ্চার জন্মগত ত্রুটির কারণ অজানায় থেকে যায়। এই ঘটনাগুলি জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণগুলির কোনটাই নির্দিষ্ট ভাবে দায়ী নয়। এক্ষেত্রে ভ্রুনের বিকাশ গুলো এলোমেলোভাবে হতে পারে। এসব ক্ষেত্রে গর্ভবতী মহিলারা পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী জন্মগত বাচ্চা ত্রুটির ঝুঁকি কমাতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে দীর্ঘস্থায়ী স্বাস্থ্য পরিস্থিতি, পর্যাপ্ত পুষ্টিকর খাবার নিশ্চিত করা, বিশেষ করে ফলিক এসিডের ঘাটতি যেন শরীরে না থাকে। সেই সাথে
ক্ষতিকারক পদার্থ এড়িয়ে চলা। এছাড়া গর্ভাবস্থার আগেই মহিলাদের রুবেলা টিকা দেয়া নিশ্চিত করতে হবে। যেন রুবেলা ভাইরাসে আক্রান্ত না হয়। এক্ষেত্রে জন্মগত সংক্রমণ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এছাড়া যদি আগে থেকেই জানা থাকে যে জেনেটিক প্রবলেম রয়েছে সেক্ষেত্রে দম্পতিদের উচিত জেনেটিক কাউন্সিলিং করা। আর এই সম্পর্কে ঝুঁকি এড়িয়ে চলে সচেতনতামূলক সিদ্ধান্ত নিতে পারে। একটি সুস্থ বাচ্চার জন্মগ্রহণের ক্ষেত্রে।
শেষ কথা
স্বাভাবিকভাবেই শিশুরা বিকৃত হয় না। বেশিরভাগ গর্ভধারণ কোনো ধরনের বড় ঘটনা
ছাড়াই স্বাভাবিকভাবে অগ্রসর হয়ে থাকে। একটি ভ্রুণের বিকাশ, একটি জটিল
প্রক্রিয়া কিন্তু সেটা সুনির্দিষ্ট ভাবে নিয়ন্ত্রিত। কেননা এই প্রক্রিয়া
সাধারণত বৃদ্ধি ও বিকাশের পর্যায়েগুলির একটি সুনির্দিষ্ট ক্রম অনুসরণ করে হয়ে
থাকে। এছাড়া বাচ্চার বিকাশে অবদানকারী জেনেটিক এবং পরিবেশগত কারণগুলি সাধারণত
ভ্রুনের সুস্থতা নিশ্চিত করার জন্য কাজ করে থাকে।
যাই হোক আমরা সব সময় দেখি যে বেশিভাগ ভ্রূণই কোন সমস্যা ছাড়াই বড় হয় এবং স্বাভাবিক বাচ্চা জন্মগ্রহণ করে থাকে। যেখানে জেনেটিক মিউটেশন, পরিবেশগত কারণ বা উভয়ের সংমিশ্রণ খুব অল্প পরিমাণে বাচ্চাদের বিকলাঙ্গ করে থাকে। প্রসবের আগে যত্ন এবং স্ক্রীনিং সম্ভাব্য সমস্যাগুলোকে প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করতে এবং পরিচালনা করতে পারে। সেক্ষেত্রে মা এবং শিশু উভয়ের জন্যই ভালো হয়ে থাকে।
অর্ডিনারি আইটির নীতিমালা মেনে কমেন্ট করুন। প্রতিটি কমেন্ট রিভিউ করা হয়।
comment url